এপ্রিলে সিঙ্গাপুরে কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৬.৯%

বণিক বার্তা ডেস্ক

টানা সাত মাস সিঙ্গাপুরে শিল্পোৎপাদন কমেছে ছবি: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস

এপ্রিলে টানা সাত মাসের মতো কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম কমেছে সিঙ্গাপুরে। ক্রমাগত এ সংকোচন পরিস্থিতি প্রযুক্তিগত মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস। 

শুক্রবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোর্ড প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, মার্চে সংশোধিত ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পর সিঙ্গাপুরের কারখানার উৎপাদন এপ্রিলে বছরওয়ারি কমেছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ব্লুমবার্গের জরিপে বিশ্লেষকদের অনুমিত ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সংকোচন পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি। অস্থির বায়োমেডিকেল খাতকে বাদ দিয়ে সামগ্রিক উৎপাদন ৬ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে। 

এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, ইলেকট্রনিকস শিল্প প্রত্যাশার তুলনায় গুরুতর মন্দার সম্মুখীন হবে। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় (এমটিআই) সতর্কতার সঙ্গে উল্লেখ করে, সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইলেকট্রনিকস ডাউন সাইকেলটি (সাধারণত চাহিদা কমে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ বিক্রি কমে যাওয়া) আগের অনুমানের চেয়ে আরো গুরুতর ও বর্ধিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের রফতানিচালিত উৎপাদন খাতে লিঞ্চপিন ইলেকট্রনিকসের অবদান ৪৫ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় এপ্রিলে এ খাতের উৎপাদন ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। লিঞ্চপিন ইলেকট্রনিকস মূলত ইলেকট্রনিক পণ্য, সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত অংশীদারত্ব ও বিভিন্ন সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে। খাতটি সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যচালিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ইলেকট্রনিকসের মধ্যে কম্পিউটার পেরিফেরাল ও ডাটা স্টোরেজ সেগমেন্ট উৎপাদন নেমেছে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশে। অন্যান্য ইলেকট্রনিক মডিউল ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন ১১ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। তাছাড়া সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন পুনরায় কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে। 

পরিবহন প্রকৌশল ব্যতীত অন্যান্য উৎপাদন ক্লাস্টার প্রতি বছর আউটপুট সংকোচনের মুখোমুখি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে সবচেয়ে খারাপ করেছে বায়োমেডিকেল ম্যানুফ্যাকচারিং। এ খাতের উৎপাদন কমেছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ। যদিও মার্চে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ইতিবাচক বৃদ্ধি ঘটেছিল। তবে এ খাতের মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য উৎপাদন ১৪ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চিকিৎসাযন্ত্রের চাহিদা কম থাকায় চিকিৎসা সারঞ্জাম উৎপাদন ৭ দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের সম্মুখীন হয়েছে।

বিপরীতে পরিবহন প্রকৌশল খাতে ইতিবাচক চিত্র বিদ্যমান। খাতটির উৎপাদন বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও তা মার্চের রেকর্ড ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় কম। শিপইয়ার্ডভিত্তিক কার্যক্রমে গতিযোগ এবং তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে মেরিন ও অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং খাত সম্প্রসারণ হয়েছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে বিশ্বব্যাপী এয়ার ট্রাফিক বৃদ্ধির পেছনে বাণিজ্যিক এয়ারলাইনস রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক কাজের সঙ্গে অ্যারোস্পেস খাতটি ১৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

মালয়েশিয়ার মেব্যাংক রিসার্চের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ চুয়া হাক বিন বলেন, ‘ইলেকট্রনিকস মন্দা প্রায়ই ব্যবসা চক্রের পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এপ্রিলে তীব্র উৎপাদন সংকোচন প্রযুক্তিগত মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়েছে, যা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।’ 

সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক ব্যাংক ডিবিএস গ্রুপ রিসার্চ ইকোনমিস্ট চুয়া হান টেং মনে করেন, ঝুঁকি বৃদ্ধিসহ কারখানার উৎপাদন পরিস্থিতি আরো কয়েক মাস নেতিবাচক থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন