মেহেরপুরে বেশির ভাগ নলকূপে পানি উঠছে না

মো. মাহাবুব আলম, মেহেরপুর

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নে পানির জন্য দীর্ঘ লাইন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মেহেরপুরে ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর একেবারই নিচে নেমে যায়। অন্যান্য বছর শুষ্ক মৌসুমে পানির তেমন সংকট না থাকলেও চলতি বছর তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাধারণত ৭৫-১০০ ফুট গভীরে পাইপ স্থাপন করলে নলকূপে পানি ওঠে। তবে এবার জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ নলকূপ রয়েছে। যার ৯০ শতাংশ নলকূপেই পানি ওঠে না। শুধু হস্তচালিত নলকূপ নয় বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি উঠছে না।

অনাবৃষ্টি ও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ কারণে সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান পরিবেশবিদরা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলায় বড় কোনো নদ-নদী নেই। একসময়ের ছোট নদ-নদীও এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়ন মাথাভাঙ্গা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ নলকূপ রয়েছে। হস্তচালিত এসব নলকূপে শীত ও বর্ষাকালে পানির সংকট না থাকলেও গ্রীষ্মকালে প্রকট আকার ধারণ করে। একই অবস্থা মেহেরপুর সদর উপজেলার ভৈরব নদের পাড়ে অবস্থিত বুড়িপোতা ইউনিয়ন ও মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের। এসব এলাকার ৯০ শতাংশ নলকূপে পানি ওঠে না। শুধু হস্তচালিত নলকূপ নয় বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি উঠছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যাদের নলকূপ একটু গভীর সেখানে পানি নিতে ভিড় জমায় সবাই। বৈশাখ মাসের শেষ দিকেও পানির দেখা মিলছে না এ অঞ্চলে। খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ। সেচের পানির জন্য গভীর রাত পর্যন্ত চাষীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিনে পাম্পে পানি ওঠে না এবং অনেক সময় বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প পুড়ে যায়।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে ৭৫টি সাবমার্সিবল পানির পাম্প এসেছে, সেগুলো বসাতে এক মাস সময় লাগবে। তখন আর পানির সংকট থাকবে না।’ তবে সেচকাজের কোনো সমাধান দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন সিরাজুল ইসলাম। বৃক্ষ নিধনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। এজন্য পানির স্তর নিচে নেমেছে বলে মনে করেন তিনি। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্নভাবে প্রকৃতির ওপর আঘাত করা হচ্ছে। এজন্য প্রকৃতিও পাল্টা আঘাত করছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।

মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. এএসএম নাজমুল হক সাগর বলেন, ‘আমার নির্বাচনী আসনের কিছু এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন