তিন মাস বন্ধ ভোলার ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র

এইচ এম জাকির, ভোলা

ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় সিনহা গ্রুপের গ্যাসভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন মাস আগে বন্ধ হয় ভোলার ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর পর থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। ফলে দেখা দিচ্ছে লোডশেডিং। তিন মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। যা চলতি তাপপ্রবাহকে ভোলাবাসীর জন্য অসহনীয় করে তুলেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বীপ জেলা ভোলার ডিজেলচালিত ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে চাহিদা কোনোভাবে মেটাতে পারেনি তৎকালীন পিডিবি। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও লোডশেডিং লেগেই থাকত। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে ২০০৭ সালে সিনহা গ্রুপ ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় গ্যাসভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় এ কেন্দ্র।

তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় সময়ই ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক-দুইদিন বন্ধ থাকত। এছাড়া বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুবার মাসব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়।

সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায় এ কেন্দ্রের কার্যক্রম। এর পর থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পুরো জেলা। ২৪ ঘণ্টা পর জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সচল হয় ভোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় উপজেলা ও এলাকাভিত্তিক ঘন ঘন লোডশেডিং দেখা যায়। দিন ও রাতে বিদ্যুতের এমন অবস্থায় বিপর্যস্ত জনজীবন।

স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড দাবদাহ বিরাজ করছে উপকূলীয় এ জেলায়। কখনো ৩৮ ডিগ্রি, কখনো ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিদ্যুতের লোডশেডিং ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানার মালিকরা।

শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ ও মেকানিক আবু জাফর জানান, তাদের পুরো ব্যবসা বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কাজের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

ইলিশা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী জহির ও মিজান জানান, কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

কেবল অপারেটর কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‌একদিকে গরম আর অন্যদিকে লোডশোডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ। বিদ্যুতের কারণে আমরা সঠিকভাবে সার্ভিস দিতে না পারায় মাস শেষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল ওঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’

বাসাবাড়িতে শিশুদের নিয়ে ঘরের গৃহিণীরা পড়েছেন আরো বিপাকে। গৃহিণী আকলিমা, সুলতানা, মোসাম্মাৎ শাহিনুর ও তাসলিমা জানান, লোডশেডিংয়ে ঠিকমতো বাসার ফ্রিজ চালানো যাচ্ছে না। রাতে বেশি গরম পড়ে, তখন ভোগান্তির শেষ থাকে না। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে খুবই কষ্ট হয়।

তবে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইয়াসিন কাউসার। তিনি বলেন, ‘‌ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৮০ হাজার গ্রাহকের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২২ মেগাওয়াট। যে কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এ জেলায় যদি গ্রিড সাবস্টেশন করা যায়, তাহলে এমন সমস্যা থাকবে না।’

এ ব্যাপারে ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‌যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সমস্যা হয়েছে। আশা করি, ছয় মাসের মধ্যে এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন