মৌসুমের প্রথম নিলাম

চায়ের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি: বণিক বার্তা

নতুন মৌসুমের চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম শুরু হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামের প্রথম নিলামে কেজিপ্রতি চায়ের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৮৫০ টাকা। প্রথম নিলামে ১৪ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব হলেও অর্ধেক চা- ছিল অবিক্রিত। 

নিলাম বাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমের (২০২৪-২৫) প্রথম নিলামে সর্বমোট ২৮ হাজার ৫২৫ বস্তায় ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৭ দশমিক কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করে দেশের ১৬৮টি বাগান ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৬৮৫ বস্তায় ১১ লাখ ৮১ হাজার ৮৮১ কেজি দানাদার চা এবং হাজার ৮৪০ বস্তায় লাখ ৪১ হাজার ৫১৬ কেজি গুঁড়ো চা নিলামে তোলা হয়েছে।  যদিও আগের বছরের প্রথম নিলামে চা প্রস্তাব করা হয়েছিল লাখ ২৯ হাজার ৬৮৭ কেজি চা উঠেছিল। সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই চট্টগ্রামে এই চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। 

নিলাম সংশ্লিষ্ট ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, মধুপুর বাগানের জিওবিপি গ্রেডের চা ৮৫০ টাকা কেজি দরে (১০ বস্তা) কিনে নেয় মেসার্স মোল্লা টি কোম্পানি। আবার কাজী এন্ড কাজী বাগানের অর্থড´ চায়ের বস্তার একটি প্যাকেজ কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা দরে কিনে নেয় জিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান।  এছাড়াও লস্করপুর বাগানের একটি প্যাকেজ (জিবিওপি-১০ বস্তা) চা ৪০৩ টাকা  কেজি দরে, গাজীপুর চা বাগানের (ওএফ-১০ বস্তা) ৩৫০ টাকা কেজি দরে, রুথনা বাগানের ১০ বস্তা জিওএফ গ্রেডের চা ৪১৫ টাকা কেজি দরে, মধুপুর বাগানের আরডি গ্রেডের ১০ বস্তা চা ৪১৯ টাকা কেজিদরে, মধুপুর বাগানের ডি গ্রেডের ১০ বস্তা চা ৪১৪ টাকা দরে এবং লস্করপুর বাগানের সিডি গ্রেডের ১০ বস্তা চা ৪১০ টাকা  কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে চা নিয়ে প্রতি ১০ বস্তায় একটি প্যাকেজ তৈরি করে বাগান মালিকরা। যদিও বড় বাগানগুলো ২০ বস্তায় একটি লট তৈরি করে নিলামে চা পাঠানোর সুযোগ পায়। 

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি) সূত্রে জানা গেছে, এবারই প্রথম চা নিলামের ক্ষেত্রে ন্যুনতম বেঁধে দেয়া দামে লেনদেন হয়েছে চায়ের। ২০১৯ সাল থেকে চায়ের দাম ক্রমাগত কমতে থাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চায়ের ন্যুনতম ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় চা বোর্ড। শর্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ গ্রেডের চায়ের দাম কেজিপ্রতি ন্যুনতম ৩০০ টাকা এবং সর্বনি¤œ গ্রেডের চায়ের ন্যুনতম দাম ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা। যদিও চট্টগ্রামের প্রথম নিলামে ১৬০ টাকার কাছাকাছি দাম নামলেও সর্বোচ্চ দামের প্রায় তিনগুণ বেশি দামে চা বিক্রি হয়েছে।

নিলাম সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চায়ের সকল পক্ষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নিলামে চায়ের ন্যুনতম দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ১০টি নিলাম, শ্রীমঙ্গল পঞ্চগড়ের ৫টি করে নিলাম ন্যুনতম বেঁধে দেয়া দামে লেনদেন হবে। এসব পরীক্ষামূলক নিলামের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে চা বোর্ড। আগামী মে অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রামের দ্বিতীয় চা নিলামে ২১ হাজার ৩৭৪ বস্তায় সর্বমোট ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬২ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করবে চা উৎপাদকরা। প্রথম নিলাম হিসাবে চায়ের গড় দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকারও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিষয়ে জানতে চাইলে কেএস ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম শহীদুল্লাহ শাহজাহান বণিক বার্তাকে বলেন, চায়ের বাজারমূল্য তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে উৎপাদক, ক্রেতা ব্রোকার্স সবার সুবিধার কথা বিবেচনা করেই চা বোর্ড ন্যুনতম মূল্য সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রথম নিলামে ভালোভাবেই নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হয়েছে। চা খাতের সবগুলো যাতে লোকসান এড়িয়ে ভালোভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য নানামুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম নিলাম নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আশাকরি নতুন পদ্ধতির সবগুলো চায়ের নিলামও সফল ভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, দেশে চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২০ হাজার কেজি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি। ক্রমবর্ধমান উৎপাদন প্রবৃদ্ধি সত্তে¡ আশানুরূপ রফতানি না হওয়ায় নিলামে চায়ের দাম অস্বাভাবিক কমে যায়। নতুন মৌসুমের প্রথম নিলামে ন্যুনতম দর থাকায় চায়ের দাম কিছুটা স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন