সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতুতে লাইটারেজ জাহাজের ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : বণিক বার্তা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা দিয়েছে একটি লাইটারেজ জাহাজ। এমভি সমুদা-১ নামের ওই জাহাজটি দুপুরে জোয়ার ও বাতাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ৯ নম্বর স্প্যানে আঘাত করে। এতে সেতুর স্প্যান সহ নিম্নাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নৌ-পুলিশের সহায়তায় সেতুর সঙ্গে আটকে থাকা জাহাজটি টাগবোটের মাধ্যমে উদ্ধারে চেষ্টা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে,  দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে লাইটারেজ জাহাজটি কালুরঘাট সেতুর উজান অংশের ৯ নম্বর স্প্যানে আঘাত করে। খবর পেয়ে রেলের প্রকৌশল ও সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ চলছে। উপরের ট্র্যাক নির্মাণ শেষে সড়কপথ তৈরির কাজ চললেও নিচের বেশ কিছু কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সেতুতে জাহাজের ধাক্কায় কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি তদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল।’ তবে ট্র্যাকের ক্ষতি না হওয়ায় আপাতত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

নৌ-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামিদচর এলাকার এমভি সমুদা-১ এর মালিকপক্ষের একটি ডকইয়ার্ডে লাইটারেজ জাহাজটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লাইটারেজের মূল চালক না থাকায় সেকেন্ড অফিসার দিয়ে ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও প্রবল বাতাস ও জোয়ারের তোড়ে জাহাজটি সেতুতে আঘাত করে। খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ পুলিশের একটি টাগবোট পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জাহাজটি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাট নৌ থানা কর্তৃপক্ষ। 

সদরঘাট নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, এমভি সমুদা-১ এর মূল মাস্টার কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। যার কারণে ডকইয়ার্ডে নিয়ে যেতে লাইটারেজ জাহাজটি চালাচ্ছিলেন সেকেন্ড মাস্টার। বাতাসের কারণে তিনি ডকইয়ার্ডে নিয়ে যেতে না পেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে সেতুতে আঘাত করে লাইটারেজ জাহাজটি। খবর পেয়ে রেলওয়ের সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেছেন। তারা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে মামলা করতে চাইলে আমরা সেটি নেয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতু অংশে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক বাল্কহেড ও ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন বালি উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর পূর্ব অংশ থেকে অনুমোদনহীন ভাবে তোলা এসব বালি প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা ও দ্রুতগতিতে কালুরঘাট সেতুর বিভিন্ন স্প্যানের নিচ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উত্তোলনকারীরা। বালি উত্তোলনের কারণে প্রায় শতবর্ষী সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্রুতগতির এসব বাল্কহেড ও ড্রেজারে সেতুটি দুর্ঘটনার মুখে পতিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। 

সেতু সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে পশ্চিম পাশে নদীর ফেরী চলাচলের অংশে একটি লাইটারেজ জাহাজ ভেসে এসে সেতুতে আঘাত করেছে। রেলওয়ে ও নৌ পুলিশের একটি টিম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় নৌ-পুলিশের মাধ্যমে জাহাজটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেতুর নিচের অংশে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেটি তদন্ত ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। তবে উপরের অংশে তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় ট্রেন চলাচলে সমস্যা হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন