খুলনায় ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্প

বর্ধিত মেয়াদের সময় বাকি দেড় মাস, কাজের অগ্রগতি ১৩ শতাংশ

শুভ্র শচীন, খুলনা

খুলনার ভৈরব নদের দিঘলিয়া প্রান্তে নির্মীয়মান সেতু ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে খুলনা মহানগরীর ভৈরব নদে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে বর্ধিত মেয়াদের সময় এক মাস বাকি থাকলেও দিঘলিয়া প্রান্তে নয়টি আর শহর প্রান্তে দুটি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে, যা পুরো কাজের মাত্র ১৩ শতাংশ। সওজ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সব জটিলতা নিরসন করে দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

এদিকে ১৩ মে ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া প্রান্ত পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তবে নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। এত বছরেও সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়া দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন। ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘সেতুর বর্তমান নকশায় কম গতির যানবাহন চলাচল করলে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।’

তবে সড়ক বিভাগ বলছে, তারা স্টিল স্ট্রাকচারে যাবে নাকি কংক্রিট স্ট্রাকচারে যাবে; তা এখনো বিবেচনায় রয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচারে গেলে নদের নাব্য বেশিদিন রাখা সম্ভব হবে। স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে খরচের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।

কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক এসএম নাজমুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেতুটির কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে আমাদের। জমি বুঝে পেতেও সময় লেগেছে। শহর প্রান্তের জমি বুঝে পাননি এখনো। আগামী ৩০ জুন নির্মাণকাজের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে। তবে নতুন করে দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছি।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতুসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় হবে। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করে সওজ। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ছয় মাস পর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৪ মে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, সেতুর খুঁটি বসবে ৩০টি। এর মধ্যে শহর অংশের কুলিবাগান থেকে রেলগেট পর্যন্ত ১-১৪ নম্বর খুঁটি এবং দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭-২৮ নম্বর খুঁটি বসবে। রেলগেট প্রান্তে নদের পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নম্বর এবং দিঘলিয়া প্রান্তে নদের পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নম্বর খুঁটি বসবে।

কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে আরো দেড় বছর। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। গত সাড়ে তিন বছরে দিঘলিয়া প্রান্তে নয়টি আর শহর প্রান্তে দুটি খুঁটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তৃতীয় দফায় আরো দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে মূল সেতু কংক্রিটের পরিবর্তে হবে আর্চ স্টিলের। এরই মধ্যে সংশোধিত নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে সড়ক বিভাগ। চলতি মাসেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগ খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নতুন নকশায় সেতুর প্রশস্ততা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হবে। রূপসা সেতুর মতো দুই পাশে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন থাকবে। ওজন কম এবং নদের ভেতরে পিলারের প্রয়োজন না হওয়ায় আর্চ স্টিল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় সামান্য বাড়বে। তবে নকশা পরিবর্তন কাজের গতিতে কোনো সমস্যা হবে না।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘দিঘলিয়া প্রান্তে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। শহর প্রান্তে আমরা জমি বুঝে পাওয়ার জন্য শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। এছাড়া রেলওয়ের সঙ্গে আমাদের জমি হস্তান্তর কার্যক্রম অনেকটা এগিয়েছি। তবে কাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও ধীরগতি রয়েছে। তারা প্রত্যাশিত গতিতে কাজ করেনি। এ ব্যাপারে বারবার সতর্ক করেছি। এখন কাজের গতি না বাড়ালে ব্যবস্থা নেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন