ঈদ-পরবর্তী চাহিদা মন্দায়ও দাম বাড়ছে মসলাপণ্যের

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের খুচরা বাজারেও ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

স্বাভাবিকভাবে ঈদের পর মসলাসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমে আসে। ফলে দামও কমে আসে এসব পণ্যের। তবে এ বছর ঈদের পর চাহিদা মন্দায়ও অস্থির হয়ে উঠেছে অত্যাবশ্যকীয় গরমমসলা ও ড্রাই ফ্রুটসের বাজার। সরবরাহ না বাড়লে আসন্ন কোরবানির ঈদে প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পর পাইকারি বাজার চালু হলে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের প্রায় আড়াই মাস বাকি থাকলেও অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার বাজার। সদ্য শুকনো মরিচের মৌসুম শেষ হলেও পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বেড়েছে আস্ত হলুদের দামও। কোরবানির সময়ে চাহিদাসম্পন্ন ড্রাই ফ্রুটস বিশেষত কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কিশমিশ, পেস্তা বাদাম, মিষ্টি আলুবোখারা, টক আলু বোখারার বাজারও চড়াও হয়েছে। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের খুচরা বাজারেও।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনো মরিচ, হলুদ ও এলাচের দাম। এছাড়া কালিজিরা, দারচিনি, মেথি, সরিষা, জয়ত্রি ও জায়ফলের মূল্য বেড়েছে। শুকনো মরিচের দাম কেজিপ্রতি ২৫-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে লেনদেন হচ্ছে সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩১০ টাকায়। হলুদের দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেড়ে ২২৫-২৬৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া এলাচের দাম কেজিপ্রতি হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। কালিজিরার দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ৩০০-৩০৫ টাকায়, মেথির দাম ৫-৭ টাকা বেড়ে ১২২-১২৫ টাকায়, সরিষার দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে ৭৫-৭৮ টাকায়, জায়ফলের দাম ৪০-৫০ টাকা বেড়ে প্রায় ৭০০ টাকায় এবং জয়ত্রি ১০০ টাকা বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকায়। 

অন্যদিকে মিষ্টি আলুবোখারার দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩৫ টাকা বেড়ে ৪৫৫-৪৬০ টাকায়, টক আলুবোখারা ৬০ টাকা বেড়ে ৪৯০ টাকায়, কিশমিশ ৫৫-৬০ টাকা বেড়ে ৫২৫-৫৩০ টাকায়, কাঠবাদামের দাম ৫০-৬০ টাকা বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৪০ টাকায়। এছাড়া কাজুবাদামের দাম কেজিপ্রতি ১০০-১৩০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৬০ টাকায়, পেস্তা বাদামের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ২৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। 

কোরবানিতে প্রায় সব মুসলিম পরিবারেই পশু জবাই কিংবা মাংস রান্না হয়। ফলে গরমমসলার বাজারে এ সময় বাড়তি চাহিদা থাকে। তাছাড়া ঈদের সময় নানান পদের খাবার রান্নায় ব্যবহার হয় ড্রাই ফ্রুটস। ফলে স্বল্প সময়ের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে এসব পণ্যের মজুদ বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে।

চাক্তাইয়ের মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্স মসলা বাণিজ্যালয়ের কর্ণধার মো. কায়সার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রোজার ঈদে পোশাকসহ ডালজাতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু কোরবানির ঈদের সময় গরমমসলা ও ড্রাই ফ্রুটসের চাহিদাই বেশি। হলুদ, মরিচ দেশে উৎপাদন হলেও বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিশ্ববাজার থেকেও আমদানি করতে হয়। তাছাড়া নিত্য চাহিদার অন্যান্য গরমমসলার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হচ্ছে বিশ্ববাজার থেকে। কোরবানির ঈদের আগে বাড়তি চাহিদা থাকায় এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’ তবে এ বছর সংকটের আশঙ্কায় কোরবানির ঈদের অনেক আগেই বাজারে কৃত্রিম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ ব্যবসায়ী। 

দেশে গত এক বছরের ব্যবধানে পচনশীল মসলাপণ্যের মধ্যে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক বেশি। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার পাশাপাশি এলসি (ঋণপত্র) ও ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশি দামে এসব নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তবে কোরবানি ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে হলুদ ও মরিচের। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি পরিবারই জিরা, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, ধনিয়া, লবঙ্গ, জায়ফল ও জয়ত্রির মতো গরমমসলাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সংগ্রহ করে। যার কারণে দামও বৃদ্ধি পায়। এবার অবশ্য একটু বেশি আগে থেকেই বাজার চড়েছে। দেশীয় নানান সংকটের পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতায় মসলা ও ড্রাই ফ্রুটসের বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

জানতে চাইলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলিস্তান ফিডের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ মসলাপণ্যের চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় এবার আমদানি কম হয়েছে। তাছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, শুল্ক বাড়ানোর কারণে আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই কোরবানির ঈদের দুই মাস আগে থেকেই এবার মসলা সংগ্রহ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন