তীব্র গরমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

দাম কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজ আদা রসুনের

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের বাজারে। তীব্র গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এসব পণ্য মজুদ না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী। ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। দেশীয় উৎপাদন মৌসুমও প্রায় শেষ। এ অবস্থায় ঈদের পর থেকে পণ্যটির দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে তীব্র গরমের কারণে পেঁয়াজ নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হলে বাজার নিম্নমুখী হয়।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী অন্যতম। তীব্র গরমের কারণে এসব জেলাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মোকামের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে ফ্যান ব্যবহার করা হয় কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক গুদামের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এক কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০-১৮৫ টাকায়। দেশী রসুনের কেজি ১০০-১১০ টাকা। আমদানি করা (চীনা) রসুনের দাম ১৮২-১৮৫ টাকার মধ্যে। গত দুই-তিনদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৩-৪ টাকা। ৫-১০ টাকা কমেছে আদা ও রসুনে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এসব পণ্যের দাম আরো কমে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

খাতুনগঞ্জের চাক্তাইয়ের কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘পচনশীল পণ্য মজুদে ঝুঁকি বেশি। পেঁয়াজ-রসুনের মতো পণ্য ভালো থাকলে দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু পচন ধরলে বিপুল লোকসানের ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে গরম বেশি হওয়ায় লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে এসব পণ্য দ্রুত বাজারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হলেও দাম কিছুটা কমেছে।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাবনা, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের মতো শীর্ষ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলাগুলোয় পণ্যটির দাম নিম্নমুখী। এক সপ্তাহ আগেও মণপ্রতি পেঁয়াজ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় লেনদেন হতো। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। 

খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঈদের আগে-পরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু তীব্র গরমে পচে যাওয়ার কারণে দাম কিছুটা কমছে। রসুন ও আদার দামও কমছে।’

রাজবাড়ীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। সদর উপজেলার বানিবহ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন আরজু বলেন, ‘গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষক বাজারে বেশি বেশি পেঁয়াজ আনছেন। এ কারণে দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকা ছিল, এখন তা ৪০-৪৫ টাকায় নেমে এসেছে।’ 

দাম না কমলেও স্থিতিশীল আছে ফরিদপুরের পাইকারি বাজার। হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজারের ‘মিতা বাণিজ্যালয়’-এর বিপ্লব সাহা জানান, গত এক সপ্তাহে ফরিদপুরে পেঁয়াজের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। পাবনার লাইব্রেরি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জামির উদ্দিন বলেন, ‘‌গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি।’

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বণিক বার্তার পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী প্রতিনিধি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন