পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

ইউজিসির নির্দেশনার পরও নিয়োগ বাড়ছে মাস্টাররোলে

সাইফ সুজন

ছবি: ইউজিসি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কয়েক বছর ধরেই মাস্টাররোলে (দৈনিক ভিত্তিক) নিয়োগ বন্ধে নির্দেশনা দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এক্ষেত্রে যোগ্যতা পদ থাকার শর্তে আগের মাস্টাররোলের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে নিয়োগের সুযোগও দেয়া হয়। কমিশনের দফায় দফায় দেয়া নির্দেশনার পরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ছে।

ইউজিসির সম্প্রতি তৈরি করা এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী ছিলেন হাজার ১০৩ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মাস্টাররোলে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজার ৩০৯ জন। অর্থাৎ ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে নিয়োগ বাড়ছে।

ইউজিসির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মাস্টাররোল চুক্তিভিত্তিক উপায়ে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাদেরই বিভিন্ন পদে স্থায়ী করা হয়। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও মাস্টাররোলের কর্মচারীরাই অগ্রাধিকার পেয়ে আসছেন। এর কারণ মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রতিষ্ঠানের ওপর এক ধরনের অধিকার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বিশেষ সুবিধা বা আনুকূল্য নিতে চান। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতি চলে আসছে।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, মাস্টাররোলে নিয়োগ দেয়া হয় দৈনিক ভিত্তিতে। অর্থাৎ প্রতিদিনের মজুরি ভিত্তিতে বেতন দেয়া হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাস্টাররোলে নিয়োগ স্থায়ী পদে নিয়োগের পূর্ব ধাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ যারা মাস্টাররোলে নিয়োগ পেতেন, তারাই পরবর্তী সময়ে রাজস্ব পদে নিয়োগ পাচ্ছিলেন। কারণ মাস্টাররোলে কাজ করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তাদের এক ধরনের অধিকার তৈরি হয়। ফলে যোগ্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল। আর নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেহেতু একটি অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম থাকে, তাই এর বাইরে কোনো কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সময়ে মাস্টাররোলে নিয়োগ বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে নিয়োগ বেড়েছে। অন্যদিকে মাস্টাররোলে নিয়োগকৃত কর্মচারীর সংখ্যা কমেছে ১১টিতে। আর বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্তের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার পরও মাস্টাররোলে নিয়োগ বেড়েছে এমন তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গমাতা শেখ ফুজিলাতু ন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ জনে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . মো. আবু তাহের বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে, এজন্য দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা কর্মশালা করা হয়েছে। লিখিত নির্দেশনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে মৌখিকভাবেও দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পুরোপুরি আর্থিক প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত হচ্ছে না। বিশেষ করে মাস্টাররোলে নিয়োগ বন্ধ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকবার নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও সাম্প্রতিক অর্থবছরের তথ্যে দেখা গেছে, মাস্টাররোলে নিয়োগ কমার বদলে বেড়েছে। এটা দুঃখজনক। আমরা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোর আরো বেশি সচেতনতা সহযোগিতা চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন