ঢাকায় চার সাবওয়ে লাইন নির্মাণে জাপানকে প্রস্তাব

শামীম রাহমানI

ছবি : বণিক বার্তা

ঢাকায় একটি মেট্রোরেল লাইন চালু হয়েছে। দুটির কাজ চলমান। আরো তিনটি লাইন প্রক্রিয়াধীন। এ ছয়টি মেট্রোরেল ছাড়াও রাজধানীতে ১১টি সাবওয়ে লাইন নির্মাণ করতে চায় সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে তৈরি করা হবে চারটি সাবওয়ে লাইন। এগুলো নির্মাণের পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য জাপানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-জাপান ষষ্ঠ যৌথ প্লাটফর্ম সভায় জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ সরকারের সেতু বিভাগ।

মেট্রোরেল ও সাবওয়ে সমজাতীয় যোগাযোগ অবকাঠামো। সাবওয়ে সাধারণত মাটির নিচে গড়ে তোলা হয়। নির্মাণে ব্যবহার হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও অনেক বেশি।

ঢাকায় চালু হওয়া ও নির্মাণকাজ চলমান থাকা তিনটি মেট্রোরেল প্রকল্প জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে। মেট্রো তিনটি নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটি জাইকার ঋণ পরিশোধ করবে। তবে সেতু বিভাগ জাপানকে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে অর্থায়ন পদ্ধতি রাখা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেল। এ পদ্ধতিতে জাপান সরকারের ঠিক করে দেয়া প্রতিষ্ঠান ঢাকার সাবওয়ে নির্মাণে বিনিয়োগ করবে এবং নির্দিষ্ট সময় তা পরিচালনার মাধ্যমে বিনিয়োগের অর্থ মুনাফাসহ তুলে নেবে।

সেতু বিভাগ পিপিপি পদ্ধতিতে যে চারটি সাবওয়ে লাইন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ‘‌রুট বি’। গাবতলী থেকে মিরপুর হয়ে কালশী-যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে মাস্তুল পর্যন্ত রুটটির দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার। স্টেশন থাকবে ১৪টি। সেতু বিভাগের করা সমীক্ষা অনুযায়ী, লাইনটি নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত আরেকটি সাবওয়ে লাইন হলো ‘‌রুট ও’। টঙ্গী থেকে মহাখালী ও সদরঘাট হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত লাইনটির দৈর্ঘ্য ২৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার। এতে স্টেশন থাকবে ২৪টি। ‘‌রুট ও’র প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত আছে সাবওয়ে ‘‌রুট এস’। কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত লাইনটির দৈর্ঘ্য ১৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার। প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দেয়া সর্বশেষ সাবওয়ে লাইনটি হলো ‘‌রুট টি’। নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত এ লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৮ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার। লাইনটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ঢাকায় চারটি সাবওয়ে নির্মাণে জাপানকে দেয়া বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী. মো. ফেরদাউস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমরা চারটি লাইন বাংলাদেশ-জাপান ষষ্ঠ যৌথ প্লাটফর্ম সভায় উপস্থাপন করেছিলাম। বিষয়টা জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দেখছে এবং প্রস্তাবগুলো নিয়ে গেছে। বিনিয়োগের পদ্ধতি কী হবে, তা আমাদের পরে জানিয়ে দেয়া হবে।’

ঢাকায় মোট ১১টি সাবওয়ে লাইন নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২০-৩০ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে চারটি লাইন বাস্তবায়ন করা। তবে এটা নির্ভর করছে অর্থায়নের ওপর।’

ঢাকা মহানগরজুড়ে সাবওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে এরই মধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে সেতু বিভাগ। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকাকে ঘিরে সব মিলিয়ে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০২ কিলোমিটার, ২০৪০ সালের মধ্যে আরো ৮৫ এবং শেষ ধাপে ২০৫০ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হবে ৭১ কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন। পুরো নেটওয়ার্ক তৈরি করতে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে চারটি সাবওয়ে নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১৩০ কোটি ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন