ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

নকশা সংশোধনের উদ্যোগ বাড়বে নির্মাণ ব্যয়

শামীম রাহমান

বাইপাইলে ট্রাম্পেট আকৃতির এ ইন্টারচেঞ্জ যুক্ত হতে যাচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নকশা: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ

রাজধানীর দ্বিতীয় উড়াল সড়ক ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবরে। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর প্রায় দেড় বছর পর এটির নকশা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সংশোধিত নকশায় বাদ পড়তে যাচ্ছে নবীনগর এলাকার একটি ‘এলিভেটেড রাইট টার্ন’। এর বদলে বাইপাইল এলাকায় যুক্ত হচ্ছে একটি ‘‌ইন্টারচেঞ্জ’। সংশোধিত নকশায় কাজ করলে উড়াল সড়কটির নির্মাণ ব্যয় বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। বর্তমানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইন্টারসেকশন থেকে শুরু হয়ে উড়াল সড়কটি আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল দিয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল উড়াল সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উড়াল সড়কে ওঠানামার জন্য তৈরি হবে ১৬টি র‍্যাম্প বা সংযোগ সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।

প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান নকশায় নবীনগর এলাকায় একটি এলিভেটেড রাইট টার্ন রাখা আছে। এটি মূলত ফ্লাইওভারের মতো কাঠামো। নবীনগর এলাকায় নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করা এবং মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রায় যাতায়াত করা যানবাহনগুলোকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার ব্যবস্থা করতে এটি রাখা হয়েছিল। 

নবীগরের এলিভেটেড রাইট টার্ন অবশ্য সংশোধিত নকশায় বাদ যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, নবীনগর এলাকাটি একই সঙ্গে শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত ও যানজটপ্রবণ। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের ছুটিতে মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেলে এখানে তীব্র যানজট হয়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নবীনগরের যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর পৃথকভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে উড়ালপথ ও আন্ডারপাস দিয়ে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে। সওজ অধিদপ্তরের অনুরোধেই মূলত নবীনগরের এলিভেটেড রাইট টার্ন বাদ দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের বাইপাইল এলাকায় যুক্ত হচ্ছে একটি ইন্টারচেঞ্জ। নকশা করা ইন্টারচেঞ্জটি অনেকটা বাদ্যযন্ত্র ‘ট্রাম্পেট’-এর মতো দেখতে। তাই এ ধরনের ইন্টারচেঞ্জকে ‘‌ট্রাম্পেট ইন্টারচেঞ্জ’ নামে অভিহিত করেন প্রকৌশলীরা। বাইপাইল ট্রাম্পেট ইন্টারচেঞ্জ তিনটি সড়ককে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সড়কগুলো হলো বাইপাইল-নবীনগর, বাইপাইল-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর। নকশা অনুযায়ী যেসব যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে না সেগুলোও এ ইন্টারচেঞ্জ ব্যবহার করতে পারবে।

নকশা সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহবুদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌সংশোধনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে নবীনগরের এলিভেটেড রাইট টার্ন বাদ দিয়ে বাইপাইলে ট্রাম্পেট ইন্টারচেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত করেছি। মূলত সওজ অধিদপ্তরের অনুরোধে নবীনগরের রাইট টার্ন বাদ দেয়া হচ্ছে। এর বদলে আমরা বাইপাইলে ইন্টারচেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত করছি। ইন্টারচেঞ্জটি আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে এক্সপ্রেসওয়ের সেবার আওতায় আনতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি বাইপাইল এলাকার যানজট নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

নকশা সংশোধনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে নবীনগরের ইন্টারচেঞ্জটির জন্য প্রয়োজনীয় জমি আমরা অধিগ্রহণ করেছি। ‌কিছুটা ব্যয় বাড়তে পারে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। সংশোধিত নকশা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। কত ব্যয় বাড়বে ডিপিপি সংশোধনের পর বোঝা যাবে।’

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালে অনুমোদন দেয় সরকার। শুরুতে এর মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। পরে আরো চার বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ। বাকি ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। শেষ হয়েছে চারটি স্টেকইয়ার্ডের নির্মাণকাজ। বিভিন্ন অংশের কাঠামোগত নকশা পর্যায়ক্রমে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এ কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা ও আশুলিয়া-সাভার এলাকার যানজট নিরসনে এ উড়াল সড়ক বড় ভূমিকা রাখবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে তৈরি করবে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগের সুযোগ। বিমানবন্দর এলাকায় এটি সংযুক্ত হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-তেঁতুলিয়া ও ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে প্রকল্পটি। তবে উড়াল সড়কটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে চলাচল করা যানবাহনকে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন