বাংলাদেশের পথে পদ্মা রেলের ১৫ কোচ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে আসার আগে চীনের তিয়ানজিন সমুদ্রবন্দরে রেলের কোচ ছবি: চায়না ডেইলি

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ১০০টি অত্যাধুনিক ব্রড গেজ কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ১৫টি কোচের প্রথম চালান চীন থেকে ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে কোচগুলো বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়ার আশা করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ১০০টি কোচ তৈরি করছে সিআরইসি তাংশান কোম্পানি লিমিটেড। কোচগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, ৫২টি শোভন চেয়ার কার, ১৮টি প্যান্ট্রি গার্ডব্রেকসহ শোভন চেয়ার কার এবং ১০টি পাওয়ার কারসহ শোভন চেয়ার কার।

কোচগুলোর প্রতিটিতেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরা বসানো থাকবে কোচের ভেতরে। আর স্লিপার কোচে ক্যামেরা লাগানো থাকবে কোচের করিডোরে। যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন কোচগুলোতে আধুনিক টয়লেট, ওয়াশিং বেসিন, স্লাইডিং দরজা, টিভি মনিটর, পরিবেশবান্ধব বায়ো টয়লেট, শারীরিকভাবে অক্ষম যাত্রীদের জন্য বিশেষ ধরনের টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে। কোচগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলার উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে।

চীন থেকে ধাপে ধাপে কোচগুলো বাংলাদেশে আনা হবে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ কোচের প্রথম চালানটি ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছে যাবে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে আরেকটি চালান আমরা পাওয়ার আশা করছি। ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালানোর লক্ষ্য রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা নির্মাণাধীন রেলপথটির কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

২০১৬ সালের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী পর্যন্ত রেলপথটি ব্যবহার করে এসব অঞ্চলের মানুষ ঢাকার সঙ্গে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে মাওয়া, সেখান থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ সাইডিং লাইন এবং তিন কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ছয়টি স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন থেকে শুরু হয় যানবাহন চলাচল। শুরুতে সরকারের লক্ষ্য ছিল, যেদিন পদ্মা সেতু চালু হবে সেদিন থেকেই ট্রেন চালানোর। এজন্য প্রকল্পের মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটির কাজে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তবে রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করতে দেরি হওয়া এবং করোনা মহামারীর কারণে নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হলে সে লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটি আগে চালু করা হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন