ক্রেতা হতে পারে জেপি মরগান

মাল্টিবিলিয়ন ডলারের কানাডীয় ব্যবসা বিক্রি করবে এইচএসবিসি

বণিক বার্তা ডেস্ক

এবার কানাডীয় ব্যাংকিং ব্যবসা বিক্রির পরিকল্পনা করছে এইচএসবিসি। কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের কার্যক্রম সংস্থাটির বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্র্যান্ডগুলোর একটি। শেয়ারহোল্ডারদের চাপের মুখে ব্যবসাকে আরো লাভজনক করার উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকটি। উদ্যোগের অংশ হিসেবে পশ্চিমের স্বল্প লাভজনক ব্যবসা গুটিয়ে এশিয়ার অধিক লাভজনক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ বাড়ানো হচ্ছে। এর আগে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসাও গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

কানাডার ব্যাংকিং কার্যক্রম বিক্রি করতে এইচএসবিসি এরই মধ্যে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের সঙ্গে আলোচনা করছে। ৮০০-৯০০ কোটি ডলারে চুক্তি হতে পারে। আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র রয়টার্সকে তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে জেপি মরগান এইচএসবিসি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এইচএসবিসির একজন মুখপাত্র বলেন, পর্যালোচনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে একটি বিকল্প হলো এইচএসবিসি ব্যাংক কানাডার শতভাগ শেয়ার বিক্রি করা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোয় ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া কিংবা বিক্রি প্রকৃতপক্ষে এইচএসবিসির বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ায় ধনীদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় আরো বড় আকারের বিনিয়োগ করতে চায়। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংকটি।

এইচএসবিসি একটি বিবৃতিতে বলেছে, আমরা আমাদের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন কানাডার ব্যাংকিং ব্যবসা নিয়ে কৌশলগত বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করছি।

তবে ব্যাংকটি কানাডীয় ব্যবসার সম্ভাব্য মূল্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ব্যাংকটির সর্বশেষ আর্থিক ফলাফল অনুসারে, গত ৩১ জুন পর্যন্ত এইচএসবিসি কানাডার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫০০ কোটি কানাডীয় ডলার ( হাজার ২০০ কোটি ডলার) পাশাপাশি ব্যাংকটির মোট ইক্যুইটি ছিল ৫৮০ কোটি কানাডীয় ডলার। কয়েক বছর ধরে এইচএসবিসি দেশটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। যদিও দেশটির ব্যবসাটি লাভজনক। চলতি বছরের প্রথমার্ধেও ব্যাংকটি ৪৯ কোটি কানাডীয় ডলার করপূর্ব মুনাফা পেয়েছে। এর অর্থ হলো, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে কানাডার ব্যবসা কিনতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হবে।

ব্যাংকটি একসময় নিজেকে বিশ্বের স্থানীয় ব্যাংক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের চাপে ব্যাংকটি এখন অধিক লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কৌশলের অংশ হিসেবে স্বল্প মুনাফা কিংবা লোকসানি কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসছে এইচএসবিসি।

এইচএসবিসি ব্যাংক কানাডায় বাণিজ্যিক, ভোক্তা বিনিয়োগ ব্যাংকিং এবং বাজার পরিষেবা ব্যবসা পরিচালনা করে। আর্থিক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভের তথ্য অনুসারে, কানাডায় সম্পদের দিক থেকে এইচএসবিসি সপ্তম বৃহত্তম এবং বাজারটিতে আধিপত্য করা বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ব্যাংক।

গত বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। এরপর জুনে ফ্রান্সের ভোক্তা ব্যাংকিং কার্যক্রম বিক্রির ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। শীর্ষ শেয়ারহোল্ডার চীনে পিং অ্যান ইন্স্যুরেন্স গ্রুপের আহ্বানের অংশ হিসেবে এশিয়া পশ্চিমা কার্যক্রম বিভক্ত করার উদ্যোগ নেয়। ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার বলি হওয়া থেকে বাঁচতে কার্যক্রম বিভক্তের চাপ দেয়া হচ্ছে। পিং অ্যান এইচএসবিসির শতাংশেরও বেশি অংশীদারত্ব রয়েছে। চীনা বীমা কোম্পানির দাবি, বিভক্ত করার ফলে এশীয় ব্যাংকিং কার্যক্রমের হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত বাজারমূল্য তৈরি হবে। পাশাপাশি পদক্ষেপের কারণে সংস্থাটিকে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি ডলারের মূলধন সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা থেকেও মুক্তি দেবে। এইচএসবিসির সদর দপ্তর লন্ডনে হলেও প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফার দুই-তৃতীয়াংশই আসে এশিয়া থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন