মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ‘প্রজন্মগত বিভাজনের’ প্রতিফলন

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রমবর্ধমান আন্দোলন থেকে ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজনীতিতে জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্মগত বিভাজন উঠে এসেছে। গাজায় হামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের কারণে রাজনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর আল জাজিরা।

কম বয়সী আমেরিকানরা আগের প্রজন্মের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের বেশি সমর্থন করছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। যা ৮১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। একইসঙ্গে ওয়াশিংটনে দ্বিদলীয় সমর্থন পাওয়া ইসরায়েলের জন্যও নতুন হুমকি তৈরি করেছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ওমর ওয়াসো বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল বিষয়ে প্রজন্মগত বিভাজনের প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি। এ বিক্ষোভ সেই ব্যবধান দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে। এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে চলেছে।’

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গত সপ্তাহে ফিলিস্তিন সংহতি ক্যাম্প তৈরি করে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ ডাকলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। এ সময় অনেক বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হন ও অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হন। তা সত্ত্বেও এ ধরনের ক্যাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

শিক্ষার্থীরা দাবি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন অর্থের উৎস প্রকাশ করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও অন্যান্য সংস্থা থেকে যেকোনো তহবিল প্রত্যাহার করতে হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের নেতাদের পাশাপাশি হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েলপন্থী দলগুলো বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ এসেছে। তবে প্রতিবাদকারীরা সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ইমান আবদেলহাদির মতে, তরুণরা দেশীয় ও বিদেশী নীতির ইস্যুতে মার্কিন অবস্থান নিয়ে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘পুরানো প্রজন্মের মতামতের প্রতি তাদের সত্যিকারের অসন্তোষ রয়েছে। তবে অসন্তোষের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যে ব্যবস্থায় দেশ চলছে তার সঙ্গে তরুণদের বিরোধ তৈরি হচ্ছে।’

আবদেলহাদি জানান, বিক্ষোভগুলো আরো বিস্তৃতভাবে মার্কিন জনমতের একটি পরিবর্তন চিহ্নিত করছে।

আমেরিকার ইতিহাস বিবেচনা করলে জনমতের বড় পরিবর্তনগুলোয় সাধারণ কিছু বিষয় রয়েছে। এ পরিবর্তন বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিলে যায় বা তাদের মাধ্যমে এর সূত্রপাত হয়। ক্যাম্পাসের সক্রিয়তাই হতে পারে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ভিত্তি বলে মন্তব্য করেন ইমান আবদেলহাদি।

কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা যায়, অল্পবয়সীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও ইসরায়েলের প্রতি আগের প্রজন্মের চেয়ে বেশি সমালোচনামুখর। তবে সামগ্রিকভাবে গাজার চলমান যুদ্ধসহ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের সমালোচনা আগের জরিপের তুলনায় বেড়েছে।

একাধিক জরিপ অনুসারে, মার্কিন উত্তরদাতাদের অধিকাংশই অবরুদ্ধ গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সমর্থন করে। তবে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরও যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ মধ্যপ্রাচ্য মিত্র ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন বজায় রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন