বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। বিশেষ করে রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি ভূমিহীন দারিদ্র্যপীড়িত লোক ছিল। এরই মধ্যে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দিয়েছি, জাতির পিতা যেটা শুরু করেছিলেন গুচ্ছগ্রাম-আদর্শ গ্রাম, সেই সঙ্গে আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখন আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, আমরা উন্নত মানের ঘর দিচ্ছি।

গতকাল নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

গৃহহীনদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই এখানে আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন, বিভাগীয় কর্মকর্তারা আছেন। আমার কথাটা হচ্ছে, আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, দলের লোক যারা আছেন সবাইকে বলব, আপনারাও খুঁজে বের করেন কোনো ভূমিহীন মানুষ আছে কিনা। কারণ, আমার লক্ষ্য হচ্ছে দেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। দরকার হলে জমি কিনে তাদের আমরা ঘর করে দেব, এজন্য আমরা ফান্ডও করেছি। সেটা আমাদের একেকটা মানুষের জীবনকে পাল্টে দেবে। পাশাপাশি আমাদের দেশেও দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

অনুষ্ঠানে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লক্ষ্য। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। সময়ে একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যেমন গড়ে তুলেছিলেন, সেই সঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন একদম গ্রামের তৃণমূল মানুষকে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য যাতে দ্রুত পরিবর্তন হয়। খাদ্যনিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয়, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যেন পূরণ হয় সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন মাত্র ১৯টা জেলা ছিল। জেলার যে মহকুমা ছিল, প্রায় ৬০টি মহকুমাকে তিনি সে সময় জেলায় রূপান্তর করেন। ৬০ জন গভর্নর নিযুক্ত করেন। তাদের হাতেই সব ক্ষমতা এবং তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। জনগণ যেন তার সেবাটা পায়, সেটি তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। যদি তিনি এগুলো করে যেতে পারতেন, তাহলে জনগণ যেমন নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারত, তেমনি দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি দ্রুত হতো। দেশে কোনো মঙ্গা থাকত না, দুর্ভিক্ষ থাকত না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর আমি দেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। তখন আমি দেশে ফিরে এসে সমগ্র বাংলাদেশ সফর করেছি। রংপুরের সব জেলায় ইউনিয়ন পর্যন্ত আমি গিয়েছি। তাদের দারিদ্র্য, জীবনযাত্রা সবকিছু আমি নিজে অবলোকন করেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে কেবল হত্যা করা হয়নি, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়েই খেলা শুরু হয়। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে যতটা সচেষ্ট, জনগণের কথা ততটা ভাবেনি। ভাবাটা স্বাভাবিকও না।

অনুষ্ঠানে রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ২১ বছর পর সরকারে আসি। রংপুরের বিভিন্ন এলাকা রংপুর থেকে শুরু করে কুড়িগ্রাম-নীলফামারী সব এলাকায় একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যাই। সেখানে আমরা লঙ্গরখানা খুলি, আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। যতবার বন্যা হয়েছে, যতবার দুর্ভিক্ষ হয়েছে আমরা কিন্তু সেখানে গিয়েছি। তখন এমন একটা অবস্থা ছিল যে যাতায়াত বলতে কিছু ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল না, নদীর পাড় দিয়ে কাদামাটিতে হেঁটে যেতে হয়েছে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা চলে গিয়েছি। কোনো জায়গা বাদ দিইনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অঞ্চলে প্রতি বছর মঙ্গা হতো, বিশেষ করে চৈত্র আর কার্তিক মাসে। আমরা এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মানুষের কাজ থাকত না, উৎপাদন থাকত না। তখন থেকেই আমরা পরিকল্পনা নিই কীভাবে অঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করব। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে কিন্তু মঙ্গা ছিল না। আমরা কিন্তু ৯৮ সাল থেকেই মঙ্গা দূর করে দিয়েছিলাম। ২০০১- বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আবার মঙ্গা শুরু হয়।

তিনি বলেন, রাজশাহীর অন্তর্গত ছিল রংপুরসহ ১৬টা জেলা। ২০১০ সালে আমরা রংপুর বিভাগ করে দিই। বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা সরকারে আসার পর অঞ্চলে আর মঙ্গা দেখা দেয়নি। মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল হয়ে গেছে রংপুর। অথচ একসময় খাবারের অভাবে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত। আমার এখনো সেই চিত্র মনে পড়ে, যখন মানুষগুলোকে দেখেছি। তারা যখন দাঁড়াত, মনে হতো শুধু হাড় আর চামড়া ছাড়া শরীরে কিছু নেই। জীবন্ত কঙ্কাল যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা আমার নিজের চোখে দেখা। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করে দিয়েছি। প্রত্যেক অঞ্চলে আমরা কাজ করেছি, এতে দুর্ভিক্ষ তো দূরই হয়েছে, এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে সব উন্নয়ন কিন্তু নির্ভর করে একেকটা সরকারের চিন্তার ওপর। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন সব সময় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই চিন্তা করেছে। আমরা সেই পথ অনুসরণ করেছি, ফলে অঞ্চলের উন্নয়ন হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সমৃদ্ধ জাতি গঠন করার লক্ষ্যের কথা জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠন করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চাই। সেটা আমাদের লক্ষ্য। ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে ঘোষণাগুলো দিয়েছিলাম, আল্লাহর রহমতে একে একে সব আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আজকে বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। সেই পরিকল্পনা আমি করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। এজন্য আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। এটাও বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত হোক, আমাদের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখুক। ভবিষ্যৎ বংশধররা সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে।

উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবার শীত পড়েছে, সবাই শীতে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি, যারা বিত্তশালী আছেন তাদের অনুরোধ করব আপনারা শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন