চার দশকের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মার্কিন ভোক্তারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য ও পরিষেবার দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে ছবি: এপি

মহামারীর শুরু থেকেই চলছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত। পণ্য সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন উৎপাদক থেকে শুরু করে বিক্রেতারা। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর তুমুল চাহিদা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। চাহিদার সঙ্গে সংগিত রেখে পণ্য পাচ্ছেন না ভোক্তারা। অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সেবার দাম বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। গত ডিসেম্বরে দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শতাংশ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার গতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো দেশটির মূল্যস্ফীতি শতাংশের ওপর রয়েছে।

পরিস্থিতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল রিজার্ভের ওপর সুদের হার বাড়াতে চাপ বাড়িয়ে তুলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বড় হুমকি তৈরি করেছে।

২০২১ সালে মহামারীর মন্দা থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে গাড়ি, গ্যাস, খাবার আসবাবপত্রের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিপুল পরিমাণ সরকারি প্রণোদনা এবং অতিনিম্ন সুদের হার জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করেছিল। দেশটির শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, অস্থিরতার মধ্যে থাকা খাদ্য গ্যাসের দাম বাদ দিয়ে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক শতাংশে। হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। নভেম্বরের তুলনায় সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি দশমিক শতাংশ বেড়েছে। হার আগের মাসের দশমিক শতাংশ বাড়ার চেয়ে কম।

তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা না। বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী। ডিসেম্বরে ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা ইউরোপীয় ১৯টি দেশে মূল্যস্ফীতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শতাংশ বেড়েছে। রেকর্ড শুরু হওয়ার পর বাড়ার গতি সর্বোচ্চ।

ছোট থেকে বড় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। মিনিয়াপোলিস অঞ্চলের একটি বেকারির মালিক নিকোল পমিজ বলেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাকে কুকিজের দাম বাড়াতে হচ্ছে। আমাদের মৌলিক কুকিজের দাম ৯৯ সেন্ট এবং প্রিমিয়ামের দাম প্রতিটি ডলার ৫০ সেন্ট। তবে আমাকে এখন মৌলিক কুকিজের দাম প্রিমিয়াম দামে বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের মুনাফা করতে হবে এবং আমরা গ্রাহক হারাতে চাই না। সুতরাং ভারসাম্য করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ঘাটতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেতন বাড়িয়ে কর্মীদের ধরে রাখতে এবং নতুন কর্মী আকৃষ্টের চেষ্টা করছে সংস্থাগুলো। তবে বেতন বাড়লেও পণ্য পরিষেবার উচ্চ দামের কারণে কর্মীরা খুব বেশি লাভবান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, মানুষের উদ্বেগ এখন মহামারী থেকে মূল্যস্ফীতির চাপের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

আশির দশকের শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে এমন মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। ১৯৮০ সালে দেশটিতে পণ্য সেবার মূল্য ২০ শতাংশ বেড়েছিল এবং অর্থনীতি গভীর মন্দায় চলে গিয়েছিল। তবে পরের বছরই মূল্যস্ফীতি বাড়ার গতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৮২ সালে মূল্যস্ফীতি আগের বছরের চেয়ে দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছিল।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি জো বাইডেনকে রক্ষণাত্মক অবস্থায় ফেলেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় চালক চাহিদা সরবরাহের মধ্যে অমিল। গত বছর ব্যবহূত গাড়ির দাম ৩৭ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। চিপ ঘাটতির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গাড়ির দাম বেড়ে যায়। পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার কারণে আসবাবপত্রের দাম আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা সহজ হলে মূল্যবৃদ্ধির গতি নিম্নমুখী হতে পারে। তবে বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ বলছেন, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই প্রাক-মহামারী পর্যায়ে ফিরছে না।

আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইএনজির প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ জেমস নাইটলি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। আমরা মূল্যস্ফীতির শীর্ষে রয়েছি বলে মনে হচ্ছে। তবে ঝুঁকি হলো আরো দীর্ঘ সময় মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন