কুয়েতে বিদেশী কর্মীদের আয়ে করারোপের প্রস্তাব

বণিক বার্তা ডেস্ক

কুয়েতের আহমদি অঞ্চলে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা ছবি: রয়টার্স

বিদেশী কর্মীদের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের লাখ লাখ কর্মী উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করেন। তবে কয়েক বছর ধরে নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশগুলো। পরিবর্তে নিজস্ব নাগরিকদের কর্মসংস্থানের হার বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এবার বিদেশী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে কুয়েতি পার্লামেন্টে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে দ্য ন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে, বিদেশী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ন্যূনতম শতাংশ করারোপের আইন প্রস্তাব করেছে কুয়েতের একজন রাজনীতিবিদ। সম্প্রতি দেশটির সংসদ সদস্য ওসামা আল-মেনওয়ার বিল পেশ করেন। বিলটি পাস হলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াকারী ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত অর্থের ওপর কর আরোপের নির্দেশ দেয়া হবে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় কারহার নির্ধারণ করবে। অন্য দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ওই কর্মীর বার্ষিক আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি হলে করহার শতাংশের কম হবে না।

এর আগে ২০১৮ সালে এমন একটি করপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল কুয়েতি সরকার। সংসদের আর্থিক অর্থনীতিবিষয়ক কমিটি কুয়েতের নাগরিক নন এমন কর্মীদের রেমিট্যান্সের ওপর করারোপের প্রস্তাব নিয়ে ভোট করেছিল। তবে সেই সময় প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। এরপর চলতি বছরের শুরুর দিকে আল-মেনওয়ারও বিদেশী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর করারোপের একটি বিল সামনে এনেছিলেন।

কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃতি করে ট্রেডিং ইকোনমিকস জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটি থেকে বিদেশী কর্মীদের পাঠানো ব্যক্তিগত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৩০ কোটি কুয়েতি দিনারে (৪৩০ কোটি ডলার) নেমে এসেছে। ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকেও (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৪০ কোটি কুয়েতি দিনার ছিল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, দরিদ্র মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় বৈশ্বিক রেমিট্যান্সপ্রবাহ ২০২০ সালে ৫৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম।

কভিড-১৯ মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়ায় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তে চলেছে বলে জানিয়েছে বহুমুখী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। তবে কভিডের প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালে রেমিট্যান্সপ্রবাহ হ্রাস ২০০৯ সালে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার চেয়ে কম। সেই সময় বৈশ্বিক রেমিট্যান্সপ্রবাহ দশমিক শতাংশ কমে গিয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কুয়েত থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল হাজার ৫২০ কোটি ডলার, যেখানে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স ছিল হাজার ৪৩০ কোটি ডলার।

আল-মেনওয়ারের রেমিট্যান্সে করারোপ-সংক্রান্ত খসড়া আইনের অধীনে একজন বিদেশী কর্মীর বার্ষিক আয় হিসাবের ক্ষেত্রে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া সব অর্থ বিবেচনায় নেয়া হবে। বিলটিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর শেষে করের পরিমাণ হিসাব করা হবে এবং সংগৃহীত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। তবে যেসব প্রবাসী কর্মীর মাসিক বেতন ৩৫০ দিনারের কম, তাদের বিধান থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ৩৬ লাখের মতো প্রবাসী কর্মী কাজ করেন। প্রবাসী কর্মীদের সংখ্যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন