করোনার প্রভাবে ব্যয় বাড়ছে ওমরাহ হজের

মনজুরুল ইসলাম

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে ওমরাহ হজ। অবশেষে আগামী মহররম (সম্ভাব্য ১০ আগস্ট) থেকে বাংলাদেশীদের জন্য ওমরাহর অনুমোদন দিয়েছে সৌদি সরকার। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমতি মিললেও বাংলাদেশীদের ওমরাহে যেতে কমপক্ষে আরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে করোনার কারণে যাতায়াত, হোটেলসহ সবকিছুতে শর্ত পালন সাপেক্ষে ব্যয় বাড়বে ওমরাহ হজের।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, সৌদি আরব শুধু ঘোষণা করেছে যে আগামী মহররম থেকে বাংলাদেশীদের ওমরাহ হজে যেতে বাধা নেই। তবে আরো অনেক আনুষঙ্গিক কাজ এখনো বাকি। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হবে। সেখানে বিস্তারিত সব থাকবে। সবকিছু প্রক্রিয়া করতে আরো অনেক সময় প্রয়োজন। অন্তত আগামী মাসের আগে বাংলাদেশীদের ওমরাহ হজে যাওয়ার সুযোগ নেই বলা যায়।

হাব সভাপতি বলেন, বছর করোনার কারণে ওমরাহ হজের খরচ বাড়বে। তবে কত বাড়বে তা চুক্তির আগে বলা সম্ভব না। আগে হোটেল রুম কয়েকজন শেয়ার করতে পারতেন। এবার হয়তো এক রুমে দুজনের বেশি থাকতে পারবেন না। আবার তারকা হোটেল ছাড়া এবার হয়তো ওমরাহ যাত্রীদের রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে হোটেল খরচ বাড়বে। আবার গাড়িতে অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। সে কারণে ওমরাহ যাত্রীদের যাতায়াত খরচও বাড়বে। এভাবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সব খাতেই দ্বিগুণের মতো ব্যয় করতে হবে।

হজ এজেন্সিগুলো বলছে, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশী ওমরাহ হজে যেতেন। এয়ারলাইনস হোটেলের মান অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজে বাংলাদেশীরা যেতেন। তবে এজেন্সিভেদে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল এক-দেড় লাখ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে এয়ারলাইনসের সর্বনিম্ন রিটার্ন ভাড়া ছিল ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে হোটেল, যাতায়াতসহ সব খরচ বেড়ে এবার দ্বিগুণ হতে পারে।

সৌদি আরবের হজ ওমরাহবিষয়ক অফিশিয়াল পেজ হারামাইন শারিফাইনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ওমরাহ করতে আসতে হলে বেশকিছু শর্ত মানতে হবে। ওমরাহ করতে ইচ্ছুক মুসল্লিরা বিশ্বের সব দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইটে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক সবাইকে আগে থেকেই বাধ্যতামূলকভাবে নভেল করোনাভাইরাসের সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে। আর সেই টিকা হতে হবে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের। এসব টিকার দুটি ডোজ গ্রহণ করা ছাড়া সৌদি আরবে প্রবেশ করা যাবে না। তবে কেউ যদি চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকার দুটি ডোজ নিয়ে থাকেন কিংবা উল্লিখিত টিকা ছাড়া অন্য কোনো টিকা নিয়ে থাকেন, তবে তাদেরও ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার বাড়তি বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ১৮ বছরের নিচে কেউ ওমরাহ হজে যেতে পারবে না।

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণেই গত দুই বছর ধরে বিশেষ শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করে সৌদি সরকার। এমনকি বাইরের দেশ থেকে কাউকে হজের জন্য অনুমোদনও দেয়া হয়নি। শুধু সৌদিতে অবস্থানকারী স্থানীয় ১৫০ দেশের প্রবাসীদের হজের অনুমোদন দেয়া হয়।

অন্যদিকে মহামারী শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় আট মাস ওমরাহ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে গত বছরের অক্টোবরে সৌদি নাগরিক বাসিন্দারা ওমরাহ পালনের অনুমতি পান। কিন্তু বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনার দ্বিতীয় তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ এড়াতে তা স্থগিত হয়ে যায়। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে হজ ওমরাহ পালনের জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসল্লি সৌদি আরব ভ্রমণ করতেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে কোটি ৯০ লাখ মানুষ ওমরাহ পালন করেছিলেন।

তবে সংক্রমণ বাড়ায় ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান লেবাননের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। ফলে এসব দেশের নাগরিকরা আপাতত ওমরাহ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন