আইনে সুরক্ষিত নয় গৃহকর্ম খাত

কভিডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়ার গৃহকর্মীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীজনিত বিধিনিষেধে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সংকুচিত হয়ে পড়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আয় কমে যাওয়ায় ব্যয় কমাতে অনেক পরিবার ছাঁটাই করে গৃহকর্মীদের এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গৃহকর্মীরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, আইনি সুরক্ষার অভাবে মহামারীকালীন অন্য কর্মীদের তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি কাজ হারিয়েছেন গৃহকর্মীরা আর তাদের বড় একটি অংশই নারী খবর ব্লুমবার্গ

আইএলও সতর্ক করেছে, এখনো বিশ্বের মোট কোটি ৫৬ লাখ গৃহকর্মীর কাজের অবস্থা উন্নতি হয়নি যদিও ২০১১ সালে একটি কনভেশনের মাধ্যমে তাদের অন্যান্য শ্রমিকের মতো একই ধরনের সুরক্ষার অধিকার দেয়া হয়েছিল আর কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জন গৃহকর্মীর মধ্যে আটজনই অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেন ফলে সংকটে তাদের কাজ রক্ষায় কোনো শ্রম বা সামাজিক সুরক্ষা ছিল না

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, গৃহকর্মীদের ওপর কভিডের প্রভাব অন্যান্য কর্মীদের তুলনায় খুব বেশি মারাত্মক ছিল অর্থাৎ অনেক বেশিসংখ্যক গৃহকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন কিংবা তাদের কর্মঘণ্টা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কমে গেছে

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইএলও জানিয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় ৬১ দশমিক শতাংশ কর্মী জাতীয় শ্রম আইন থেকে পুরোপুরি বাদ পড়েছেন পাশাপাশি ৮৪ দশমিক শতাংশ গৃহকর্মী অনানুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত রয়েছেন উচ্চস্তরের অনানুষ্ঠানিকতা আইনি সুরক্ষার অভাবে অন্যান্য কর্মীর তুলনায় গৃহকর্মীরা দুই থেকে তিন গুণ বেশি কাজ হারিয়েছেন

আইএলওর সহকারী মহাপরিচালক এশিয়া-প্যাসিফিকের আঞ্চলিক পরিচালক চিহোকো আসাদা মিয়াকাওয়া বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিকের অভ্যন্তরীণ কাজকে আনুষ্ঠানিক করা জরুরি প্রয়োজন এক্ষেত্রে শ্রম সামাজিক সুরক্ষার আইনগুলোয় গৃহকর্ম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, অঞ্চলের প্রায় ৭১ শতাংশ গৃহকর্মীর কাজের সময় নিয়ে কোনো আইনি সীমা নেই ৬৪ শতাংশের সাপ্তাহিক বিশ্রামের আইনগত অধিকার নেই আইএলওর গৃহকর্মী কনভেনশন গ্রহণের এক দশক পরে এশিয়া-প্যাসিফিকের একমাত্র দেশ হিসেবে কেবল ফিলিপাইন এটি অনুমোদন দিয়েছে

আইএলও অনুসারে, অঞ্চলে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কোটি ৮৩ লাখ গৃহকর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই নারী এশিয়া-প্যাসিফিকে পুরুষ গৃহকর্মীর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি বিশ্বব্যাপী পুরুষ গৃহকর্মীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক শতাংশই অঞ্চলের

এশিয়া-প্যাসিফিকের পাশাপাশি বিশ্বজুড়েই কাজ হারানো এবং কর্মঘণ্টা হ্রাসের মুখোমুখি হয়েছেন গৃহকর্মীরা প্রতিষ্ঠানটির ডাটা বলছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বেশির ভাগ লাতিন আমেরিকান ক্যারিবীয় দেশগুলোয় কভিডের আগের তুলনায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ গৃহকর্মী কমেছে পেরুতে হ্রাসের হার ৭০ শতাংশ সামগ্রিকভাবে সংকটের ফলে বেশির ভাগ দেশে খাতটিতে মোট কর্মঘণ্টা ৫০ শতাংশ কমে গেছে

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গৃহকর্মী নিয়োগকারী ব্রাজিলে ১০ জনের মধ্যে প্রায় সাতজনই অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেন হার দেশটির জাতীয় গড়ের তুলনায় দ্বিগুণ প্রতিবেদনটির সহলেখক ক্লেয়ার হবডেন বলেন, কভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানার আগে ৪০ শতাংশেরও কম গৃহকর্মীর কর্মসংস্থানের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা ছিল

আইএলও অনুসারে, বিশ্বজুড়ে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কোটি ৫৬ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে বিশ্বব্যাপী কাজ করা প্রতি ২৫ জন শ্রমজীবীর মধ্যে একজন গৃহকর্মের সঙ্গে যুক্ত এছাড়া গৃহকর্মীদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই নারী নারী গৃহকর্মীদের হার সবচেয়ে বেশি লাতিন আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চলে দুই অঞ্চলে নারী গৃহকর্মীদের হার যথাক্রমে ৯১ ৮৯ শতাংশ

গাই রাইডান বলেন, বিশ্বজুড়ে গৃহকর্মীদের অধিকার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন কারণ গৃহকর্মীরা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য অঙ্গ তারা পরিবারগুলোর চাহিদা পূরণ করেন গৃহকর্মীরা শ্রমিক বিশেষত নারীদের শ্রমবাজারে থাকতে সহায়তা করেন

তিনি বলেন, আমাদের কর্মক্ষেত্রে কিংবা আমরা যেখানেই থাকি না কেন, তারা আমাদের সহায়তা করেন সুতরাং কভিডের সংকট থেকে টেকসই ন্যায্য পুনরুদ্ধারে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে গৃহকর্মীরাও পিছিয়ে নেই পাশাপাশি তাদের কাজের পরিবেশ অন্য কর্মীদের পর্যায়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন