আইএমএফের কঠিন শর্ত থেকে বাঁচতে চায় পাকিস্তান

বণিক বার্তা ডেস্ক

অর্থনৈতিক সংস্কারে কঠোর শর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে পাকিস্তান। অনেকেরই আশঙ্কা, এসব সংস্কার দেশটিতে বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বড় ধরনের বিপদে ফেলে দেবে। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রত অবস্থায় রয়েছে ইসলামাবাদও। তবে থেকে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা পরিত্রাণের পথ করে দিয়েছে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কর্মসূচি। কার্যক্রমে ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করছে পাকিস্তান।

লন্ডনভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়, বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের সময় আরো কিছুটা পিছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। প্রতিবেদনে তথ্যের উৎস হিসেবে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনের বরাত দেয়া হয়। যদিও শওকত তারিন পরবর্তী সময়ে বিষয়টির সত্যতা অস্বীকার করেছেন।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কভিডের অভিঘাতে অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ভুগছে পাকিস্তান। পরিস্থিতি আরো সঙিন করে তুলেছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইসলামাবাদের জন্য আইএমএফের সহযোগিতা বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ ঋণের অর্থ ছাড়করণের জন্য বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়।

শওকত তারিনের বরাত দিয়ে এফটি বলছে, জ্বালানি খাতে ট্যারিফ বৃদ্ধি সেলস ট্যাক্স বাড়ানোর যে শর্ত আইএমএফ দিয়েছিল, সেটির কারণে পাকিস্তানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভুগতে হতো।

অবস্থায় জো বাইডেনের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সৈন্যকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পদক্ষেপে সহায়তার প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান। একই সঙ্গে তালেবানদের আলোচনায় বসানোর বিষয়েও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয় দেশটি। এর বিনিময়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক আইএমএফের তহবিল সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে ইসলামাবাদ।

এফটি জানাচ্ছে ওই সময়ে শওকত তারিন বলেছিলেন, আমরা এখন যে জিনিস চাচ্ছি না, সেটি হলো আমাদের দরিদ্রদের ওপর আরো বোঝা চাপিয়ে দেয়া। আমরা বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এবং তারা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।

শওকত তারিন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন গত এপ্রিলে। এর আগে আইএমএফের সঙ্গে ২০০৮ সালের এক বেইল আউট চুক্তি নিয়ে দরকষাকষিতে সফলতা অর্জন করেছিলেন তিনি। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল।

বিষয়ে তার বক্তব্য হলো, ২০০৮ সালে আমরা যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের পাশে পেয়েছিলাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে। এখনকার বিষয় ভিন্ন।

পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয় ট্রাম্প সরকারের আমলে। ২০১৮ সালে পাকিস্তানকে নিরাপত্তা সহায়তা বাবদ প্রদেয় ২০০ কোটি ডলারের তহবিল আটকে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে ইসলামাবাদের প্রতি তালেবানদের সহযোগিতার অভিযোগ আনে ওয়াশিংটন। ওই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, পাকিস্তান আমাদের মিথ্যা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। তবে এর পরও পর্যন্ত আফগান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে পাকিস্তান।

তবে শওকত তারিন এফটির ওই প্রতিবেদনের বক্তব্যকে শেষ পর্যন্ত অস্বীকার করেছেন। আইএমএফের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছেএমন বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেনএফটিকে দেয়া ওই সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সামরিক প্রশিক্ষণে ব্যয়ের জন্য কিছু তহবিল আলাদা করে রাখে। কিন্তু এর বাইরে পাকিস্তানের জন্য আর কোনো বরাদ্দ নেই। আমরাও সেটা চাই না।

শওকত তারিন বিষয়টিতে অস্বীকৃতি জানালেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে ভিন্ন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সম্প্রতি জানান, ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্প্রতি মার্কিন সক্ষমতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়ে পাকিস্তানের বিজনেস কলামিস্ট খুররম হুসেইন সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানের উচিত বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক জোরালো বিষয় উত্থাপনের মাধ্যমে আইএমএফকে তার অবস্থান থেকে সরে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা।

পাকিস্তানের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে দুই ডিজিটের মূলস্ফীতির হারে জর্জরিত। এর মধ্যেই আবার দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার কমিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

শওকত তারিন মনে করছেন, চলতি বছর দেশটির অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার হতে পারে শতাংশ। তবে হার যে পাকিস্তানকে ঘুরে দাঁড়ানোয় সহায়ক ভূমিকা রাখার মতো পর্যাপ্ত নয়, সে বিষয়টিও মানছেন তিনি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান এখন পর্যন্ত আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করেছে। কিন্তু মহামারী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশটির অর্থনীতিতে সংস্কার কার্যক্রম ধীরগতির হয়ে উঠেছে। অবস্থায় পাকিস্তানের ঋণমান আগের বি মাইনাসেই (বি-) স্থিতিশীল রেখেছে ফিচ।

আইএমএফের সহায়তা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক আসফান্দিয়ার মির বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করতে যাচ্ছেন। এটিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের আইএমএফের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার সুযোগ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো আফগান শান্তি প্রক্রিয়া কাউন্টারটেরোরিজম নিয়ে সহায়তা করতে ইচ্ছুক। ফলে ওয়াশিংটনের সামনে এখন পাকিস্তান ছাড়া আরে কোনো বিকল্পও নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন