বৈশ্বিক পর্যটন হাবগুলো এখন ভুতুড়ে শহর

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা মহামারীতে যেন থমকে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো। পেরুর মাচু পিচু থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের বালুকাময় সমুদ্রসৈকতসবগুলোই যেন খাঁখাঁ করছে। মুখ ফিরিয়ে নেয়া পর্যটকদের আকর্ষণে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন শহরের পর্যটন পেশাজীবী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

রেনেসাঁর শহর ভেনিস পুরোপুরি পর্যটননির্ভর। ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে এড্রিয়াটিক সাগরের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে পর্যটক কমেছিল ৭৩ দশমিক শতাংশ। পুরো বছরে পর্যটক হ্রাস পেয়েছে ৫৯ দশমিক শতাংশ। লাগুন সিটি টুরিস্ট গাইড কোঅপারেটিভের প্রেসিডেন্ট আনা বিগাই বলেন, পর্যটকহীন ভেনিস যেন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে, যেন পম্পেইর মতো মৃত নগরী। যখন ভেনিসের পথ ধরে হাঁটি তখন দুঃখের অনুভূতি এসে ঝাপটে ধরে।

প্যারিসেরও একই চিত্র। গত বছর আলো ঝলমল নিশাচর শহরটিতে পর্যটক কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এতে ২০১৯ সালের তুলনায় প্যারিসের পর্যটন আয় কমেছে হাজার ২১০ কোটি ইউরো বা হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর ল্যুভর মিউজিয়ামে গত বছর দর্শনার্থী কমেছে ৭২ শতাংশ।

পেরুর পর্যটন খাতে আয়ের ৮০ শতাংশ আসত ইনকা সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন মাচু পিচু থেকে। বড় আকারে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়েছে। গত বছরেও একই সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় শহরের মেয়র ডারউইন বাকা। পর্যটন খাত স্বাভাবিক হতে ২০২২ লেগে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।  

স্পেনের ব্যস্ততম পর্যটনকেন্দ্র বার্সেলোনার সড়কগুলো যেন হরর সিনেমার নির্জন গলি। ক্লাব ফুটবলের দর্শক এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকে গমগম করত বার্সেলোনা। ২০১৯ সালে বার্সেলোনার হোটেলগুলোয় ঢুঁ মেরেছে যেখানে ৮৫ লাখ পর্যটক, গত বছর তা নেমে এসেছে ১৮ লাখে।

এদিকে পর্যটন খাত টিকিয়ে রাখতে ভিন্ন পথে হাঁটছে এশিয়ার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ থাইল্যান্ড। বড় আকারে চীন, এশিয়ার অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরশীল পর্যটনকেন্দ্র স্থানীয় গ্রাহকদের ওপর নজর দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ব্যাংক হলিডে ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয়দের আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় এটা ফল বয়ে আনছে। মূলত আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল অঞ্চলটি বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে স্থানীয়দের টানতে শুরু করেছে। তবে দেশটির পর্যটন খাত মহামারী-পূর্ব অবস্থায় ফেরত যেতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে বলে মনে করছে খাত-সংশ্লিষ্টরা। এতে পর্যটননির্ভর কর্মসংস্থান বাণিজ্যিক তত্পরতাও ধাক্কা খাবে।

ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ডুব্রোভনিকে পর্যটক কমেছে ৮৫ শতাংশ। মহামারী-পূর্ব সময়ের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মধ্যযুগে নির্মিত দেয়ালঘেরা শহরটি। শহরটির পর্যটন কার্যালয়ের প্রধান আনা হারনিক বলেন, আপাতত সম্ভাবনা ভালোই মনে হচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ায় ইউরোপীয়রা হাঁসফাঁস করছে। ভ্যাকসিন সব দেশে পৌঁছে গেলে শিগগিরই তাদের পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন তিনি।

জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) বলছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক পর্যটন ৭০ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে। গত ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে ইউএনডব্লিউটিও জানায়, জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বৈশ্বিক পর্যটক পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯০ কোটি কমেছে। এতে পর্যটন খাতের লোকসান হয়েছে ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা ২০০৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি সংকুচিত হয়েছে। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পর্যটক কমেছে ৮২ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যে ৭৩ শতাংশ এবং আফ্রিকায় ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপ আমেরিকায় কমেছে ৬৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে পর্যটন খাত ৩০ বছরের আগের মাত্রায় দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক পর্যটন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বলে পূর্বাভাস ইউএনডব্লিউটিওর। তবে তা ২০১৯ সালের মাত্রায় পৌঁছতে আড়াই থেকে চার বছর লেগে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন