বর্তমান পাটকল দিয়ে লাভ করা সম্ভব নয় —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান পাট কারখানাগুলো সবচেয়ে পুরনো। সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তৈরি। শিল্পগুলো দিয়ে লাভ করা সম্ভব নয়। পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সেজন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে নতুনভাবে তৈরি করতে। গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটকলের শ্রমিকদের আমরা মোবাইলের মাধ্যমে বেতন দিয়ে দিলাম। ২৫ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে আরো আছে অনিয়মিত শ্রমিক। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বছরের পর বছর বেতন দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এভাবে একটি শিল্প চলতে পারে না।

তিনি বলেন, পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। আবার কৃষিপণ্য। আমরা পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কার করেছি। গবেষণা করে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য আবিষ্কার করছি। পরিবেশগত কারণে সবাই সিনথেটিকস থেকে মুক্তি চায়, সেখানে পাট হচ্ছে বিকল্প। ফলে বিশ্বব্যাপী খাতে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমাদের কারখানাগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে। আধুনিক করতে হবে। নতুন করতে হবে। আমরা কারখানাগুলো নতুনভাবে করব। শ্রমিকদের মধ্যে যারা আগ্রহী, তাদের আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী তাদের 

তৈরি করব। পাটকল চালু হলে তারা নতুনভাবে চাকরি পারে। পাট পাটজাত পণ্যের বিশ্ববাজার ধরতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।

পাট শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পাটকল শ্রমিকদের মজুরির টাকাসহ সব পাওনা একবারে শোধ করে দেব। এজন্য প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তবে সব ক্যাশ টাকা দেব না। ক্যাশ টাকা দিলে মেয়ের জামাই, ভাতিজা-আত্মীয়স্বজন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ভাগ চাইবে। এজন্য আমরা অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেব। এতে তারা এখন মাসে যে বেতন পাচ্ছেন, তার থেকে বেশি পাবেন।

অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে আবারো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, সমাজটাকে কলুষিত করেছে। তারা মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। যতই চেষ্টা করেন এর মূলোৎপাটন কঠিন। তবে আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো মোকাবেলার চেষ্টা করছি। আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫ সালের পর যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তারা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা শিখিয়েছে, ঋণখেলাপি শিখিয়েছে, তারা সমাজটাকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ আগে একটা আদর্শ নিয়ে চলত, নীতি নিয়ে চলত। দীর্ঘদিন এদেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ এদেশের মানুষের চরিত্র হরণ করেছে। অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা বছরের পর বছর দুর্নীতির নিয়ম বীজ বপন করেছে। আজ এটি মহীরুহ হয়ে গেছে। যতই কাটেন কোথা থেকে আবার গজিয়ে ওঠে। সেখানে আপনি যতই চেষ্টা করেন এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন।

সরকারপ্রধান বলেন, তার পরও এর মধ্যে যে খবরগুলো পাচ্ছেন? এটা কারা করেছেন? আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কে কোন দলের বিবেচনা না করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ধরছে। অনিয়মে জড়িত যাকে যেখানে পাচ্ছি আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরছি বলেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল, অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। কিন্তু আমরা আসার পর সেগুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। যতটুকু পারি সেগুলো আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি? আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলেন। করোনা মোকাবেলায় সরকার তার দল আওয়ামী লীগের নেতা নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সরকার কোন ধরনের সহযোগিতা করেছে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ যেসব কাজ করেছে, তার তথ্যও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা করোনা মোকাবেলায় একটি নীতিমালাও গ্রহণ করেছি। এক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি ব্যয় এক্ষেত্রে যদি বৃদ্ধি পায়, তা পাবে। এক্ষেত্রে যাবে বেশি কর্মসৃজন হয়। মানুষ ঘরে বসে না থাকতে হয়। তারা যাতে কাজ পায় সেই ব্যবস্থা করব। সীমাবদ্ধ সত্ত্বেও আর্থিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা সংক্রমণকালে সরকার মানুষকে রক্ষা মৃত্যুহার কমানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আমরা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্য, নভেল করোনাভাইরাস সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে। এটা অত্যন্ত কষ্টকর দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করেছি, যতদূর সম্ভব মানুষকে রক্ষা করার এবং মৃত্যুহার কমানোর। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পরিকল্পনা করেছি, পদক্ষেপ নিয়েছি। তার সুফল মানুষ পাচ্ছে।

করোনা সংক্রমণকালের বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন বাজেট আমরা দিয়েছি লাখ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আমি জানি হয়তো করোনার কারণে সবটুকু আমরা অর্জন করতে পারব কি পারব না, এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেকে সেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাজেট বক্তৃতায় এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। এটা বলব আমরা আশাবাদী।

বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে বসে বাজেটের সমালোচনা করা, এটা অনেকেই করতে পারে। কিন্তু মাঠে গিয়ে কাজ করার মতো কয়জন আছে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক যারা, তারাই শুধু কাজ করে। তারা শুধু মাঠে গিয়ে কাজ করে। অনেক উন্নত দেশ বাজেট প্রণয়ন করতে পারেনি, কিন্তু আমরা করেছি। এজন্য অর্থমন্ত্রীসহ এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন