কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য পরিশোধের জন্য বেইজিংয়ের কাছে এক বছরের সময় চেয়ে অনুরোধ করেছে ঢাকা। এতে মৌখিক সম্মতি দিয়েছে বেইজিংও। বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক টেলিফোন আলাপে বিষয়টি উঠে আসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গতকাল প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে মঙ্গলবার ৪৫ মিনিটব্যাপী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলে ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে আশ্বস্ত করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওয়াং ইর সঙ্গে আলোচনা চলাকালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় চীনা সরবরাহকারীদের পক্ষে খোলা সব ধরনের ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে দেনা পরিশোধের সময় এক বছরের জন্য বাড়ানোর অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ড. এ কে আব্দুল মোমেনের এ অনুরোধে সম্মতি দেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি নিজ দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
ফোনালাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ এবং কারিগরি দল আনার সম্ভাবনার বিষয়টি উত্থাপন করেন। প্রসঙ্গত, মহাখালীর ‘শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালকে’ কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম চিকিৎসাস্থল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে আসার বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একই সঙ্গে ড. এ কে আব্দুল মোমেন নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় চীন থেকে ডাক্তার, নার্স ও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম নিয়ে আসার বিষয়েও আলোচনা করেন। এ সময় এ বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বাংলাদেশী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়েও কথা হয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে।
এছাড়া চলমান বিশেষ সংকটপূর্ণ অবস্থায় চীন থেকে ভেন্টিলেশন মেশিন আমদানি নিয়েও দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়। এ সময় কভিড-১৯ সংকটে বাংলাদেশ চীনের পাশে দাঁড়ানোয় নিজ দেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনার সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উহানসহ দেশটির অন্যান্য অংশে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণজনিত সংকটপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভসসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে ড. এ কে আব্দুল মোমেনও এ সময় বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষায় টেস্টিং কিট, ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বেইজিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময়ে ‘আলিবাবা ফাউন্ডেশন’ এবং ‘জ্যাক মা ফাউন্ডেশনের’ দেয়া সহযোগিতার বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
এছাড়া টেলিফোনে আলাপ চলাকালে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের সময়ে উহানসহ চীনের অন্যান্য অংশে অবস্থানরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ যত্ন নেয়ার জন্যও চীন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় ৪ এপ্রিল ঘোষিত চীনের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেশটির সরকারের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফোনালাপ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মধ্যে আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করার জন্য চীনের প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-ও এ বিষয়ে সহযোগিতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
এ সময় দুই দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়টিও পুনর্ব্যক্ত করে।
