তীব্র হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বৈষম্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রকট হয়ে উঠছে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) অভ্যন্তরীণ বৈষম্য। উত্তর দক্ষিণভেদে বৈষম্য তীব্রতর হচ্ছে অর্থনৈতিক সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে। অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সমতা ফিরিয়ে আনতে চাপ বাড়ছে বরিস জনসনের সরকারের ওপর। দেশটির সিভিল সার্ভিসের সাবেক প্রধান বব কার্সলেক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পরিবহন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছে ইউকে সরকার। কিন্তু এককভাবে ধরনের পদক্ষেপ লন্ডন দেশটির অন্য অংশের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে সমর্থ হবে না।

বর্তমানে ইউকে২০৭০ কমিশনের প্রধান বব কার্সলেক যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিসের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। দেশটির গভীরে প্রোথিত ভৌগোলিক বৈষম্য নিয়ে সম্প্রতি একস্বাধীনঅনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সমতা ফিরিয়ে আনার মানে শুধু পরিবহন ব্যবস্থার বিস্তার নয়। সত্যিকারের সমতা ফিরবে তখনই, যখন সর্বত্র দক্ষতা, গবেষণা উন্নয়ন, শিক্ষা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। গতকাল ১৮ মাসব্যাপী ওই অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়।

লর্ড কার্সলেক বলেন, বরিস জনসন সরকার দেশটির পার্বত্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে এইচএসটু নামে দ্রুতগতির রেললাইন নির্মাণে বদ্ধপরিকর। পূর্ব পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রেলওয়েকে অভিহিত করা হচ্ছেহাই-স্পিড নর্থনামে। কিন্তু পরিবহনের বাইরে দেশের বিভিন্ন খাতে যে এখনই আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, সরকার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছে না। এর আগে মারমট প্রতিবেদনে উঠে আসে, যুক্তরাজ্যে গত দশকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৈষম্য আরো বেড়েছে। এর মূলে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের ব্যয়সংকোচন নীতি। কার্সলের মতে, বৈষম্য নিরসনে আরো বড়, সাহসী যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ জাতীয় সংকট হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি। এক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়তে গিয়ে সরকার যদি ন্যায্য পদক্ষেপ না নেয়, তবে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং অন্য সব অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়বে। কারণ উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ হয় এমন খাতে যুক্তরাজ্যে কর্মরত অন্তত ৪০ লাখ মানুষ, যার অধিকাংশই পূর্ব পশ্চিম মিডল্যান্ড, ইয়র্কশায়ার হামবারের বাসিন্দা। বিপুলসংখ্যক মানুষকে কার্বনমুক্ত প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ না দেয়া হলে ভবিষ্যতে গণবেকারত্ব দেখা দেবে। এসব অঞ্চলে ৪০টিরও বেশি স্থানীয় সংস্থা রয়েছে, যেখানে মোট কর্মসংস্থানের ২৫ শতাংশই হচ্ছে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে এমন খাত থেকে। এর মধ্যে ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে মোট চাকরির ৩০ শতাংশই উচ্চকার্বন নিঃসরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

অবস্থায় সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে এসব কারখানার প্রতিস্থাপন যেন শুধু অক্সফোর্ড, লন্ডন কেমব্রিজেই না হয়। কারণ একদিকে লন্ডন যেমন ইউরোপের সবচেয়ে ধনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত, তেমনি ইউরোপের ১০টি দরিদ্রতম এলাকার মধ্যে ছয়টির অবস্থানও যুক্তরাজ্যে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্ল্যাকপুল মিডলসব্রো।

ফলে সরকারকে জ্বালানি সরবরাহ, ব্যাটারি

প্রযুক্তি, গাড়ি উৎপাদনসহ কার্বন নিঃসরণমুক্ত শিল্পে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে বিশেষ করে নজর দিতে হবে সেসব এলাকায়, যেখানে শিল্প পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ কার্বননিরপেক্ষ হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে কারখানা শিল্পের পুনর্গঠনে দরিদ্র পরিবারগুলো আরো সংকটের মুখে পড়বে। এরই মধ্যে এসব পরিবার মৌলিক সেবা জ্বালানি ব্যয় বহন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তাছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদনে আগামী ২৫ বছরে শহরগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক সৃষ্টির জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কারণ টেকসই বিস্তৃত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর সদস্যদের মূলধারায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে।

প্রতিবেদনের ভূমিকায় কার্সলেক বলেন, বৈষম্য যুক্তরাজ্যের সামাজিক ব্যবস্থায় বিভেদ সৃষ্টি করছে। দেশের বহু অংশের বাসিন্দারা মনে করছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুবিধার ক্ষেত্রে তারা অন্য অংশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে ইউরোপে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্ভূত বিতর্কের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আসা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে আমাদের আরো এক দশক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা অনিবার্যভাবে আরো সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টির ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, অবস্থায় ভবিষ্যৎ চিন্তায় যুক্তরাজ্যকে উত্তর দক্ষিণ, শহর কিংবা গ্রাম সব ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন সরকার যুক্তরাজ্যের সব অঞ্চলে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর, বিষয়টি আশাব্যঞ্জকও। কিন্তু অর্জনের জন্য সরকারকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কেবল একটি সমন্বিত, বৃহদাকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই সত্যিকারের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন