বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত: ট্রাম্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পাদনে দেশটির গৃহীত যেসব নীতি অন্য দেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে, সেসব নীতি এড়ানোর চিন্তাভাবনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প এক দীর্ঘ টুইট বার্তায় এ বিষয়ে তার বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরেন। এদিকে তার সরকার ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেও আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের আগে তা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প ভারত সফরে আসছেন আগামী সোমবার। খবর এএফপি ও রয়টার্স

গত তিন বছরে ডোলান্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের কয়েকশ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যে শুল্কারোপ করেছেন। পাশাপাশি বাণিজ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেন, আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পাদন অসম্ভব হয়ে উঠুক, আমরা তা চাই না। তেমন হলে মার্কিন ব্যবসার অনেক ক্ষেত্র অন্যত্র চলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র এমন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিণত হতে চায় না, যেখান থেকে পণ্য কিনতে গিয়ে অন্য দেশকে সমস্যায় পড়তে হবে।

তিনি বলেন, আমি চাই চীন আমাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন কিনুক। কারণ, আমাদের ইঞ্জিন বিশ্বসেরা। অথচ এর আগে জেনারেল ইলেকট্রিক যাতে চীনে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিক্রি না করে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তাব দেয় হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে আরো বেশি পরিমাণে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন রফতানির চেষ্টা করছে জেনারেল ইলেকট্রিক ও ফ্রান্সের সাফরানের যৌথ উদ্যোগ সিএফএম ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু এজন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্সের অনুমোদন না দেয়ার কথা ভাবছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

তবে ট্রাম্প বরাবরই তার গৃহীত যুদ্ধংদেহী বাণিজ্য নীতির সপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে আসছেন। অন্য দেশ থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে তার শুল্কারোপের পেছনেও রয়েছে দেশের এ খাতকে রক্ষা করা। একইভাবে তিনি ইউরোপ থেকে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্কারোপের হুমকি দিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এ বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেই ট্রাম্প কার্যত চীনের শতভাগ পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেন। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে প্রথম ধাপের বাণিজ্য চুক্তির প্রেক্ষাপটে কিছু পণ্যের শুল্ক স্থগিত করলেও, এখনো অধিকাংশ পণ্যে তা বহাল রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে দেশটির ব্যবসায়িক সহযোগীরাও বসে থাকেনি। তারাও বার্বন, মোটরসাইকেল ও খামারজাত মার্কিন পণ্যে পাল্টা শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে মার্কিন খামারিদের কয়েক কোটি ডলার সহায়তা দিতে বাধ্য হয় সরকার।

এয়ারবাসে ইউরোপীয় সরকারের দেয়া ভর্তুকি নিয়ে ১৫ বছর পুরনো মামলার জেরে সর্বশেষ বেশকিছু পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে স্কচ হুইস্কি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ওয়াইন এবং ইংল্যান্ডের পনির। একই সঙ্গে ডিজিটাল কর আরোপের জেরে ফরাসি পণ্যে পাল্টা শুল্কারোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এত কিছুর মধ্যেও ট্রাম্প টুইটারে বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যদের বাণিজ্য কঠিন নয়, সহজ করতে চাচ্ছি।

দ্য পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ চ্যাড বাউন বলেন, প্রতিবার শুল্কারোপের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আরো বেশি আমেরিকান কোম্পানিকে সংরক্ষণবাদের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করেছেন। শুল্কের কারণে বহু মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেড়ে গেছে। এর ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা বিশ্বে আর বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো অবস্থায় নেই।

আসন্ন ভারত সফরের প্রাক্কালে ট্রাম্প বলেছেন, দেশটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের আগে কোনো চুক্তি সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন। মঙ্গলবার মেরিল্যান্ডে এয়ারফোর্স ওয়ানের বাইরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য চুক্তি হতেই পারে, তবে বড় ধরনের চুক্তি আমি ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন