চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি চাঙ্গা ভাব দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য শুল্ক ঝুঁকি, মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসা ও গ্রাহক আস্থায় পতন এবং মন্থর উৎপাদন প্রবৃদ্ধি—সব মিলিয়ে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের অবনতি ঘটেছে। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল বিশ্লেষণ করে দেখেছে আগামী বছরও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা ভাব বজায় থাকবে।
বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ব্যবসা জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি ও আগামী বছরের জন্য ব্যবসা প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা ২০১৬ সালের পর সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ২০১৯-২১ সালের বার্ষিক বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়ে প্রায় ৩ শতাংশ করেছে ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল, যা তৃতীয় প্রান্তিকের পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। জিডিপি, প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্বসহ প্রধান প্রধান ম্যাক্রোইকোনমিক চলকগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতির নিয়মিত পূর্বাভাস করে থাকে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৯-২১ সালের জন্য উন্নত অর্থনীতিগুলোর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে ১ দশমিক ৪ থেকে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে ইউরোমনিটর। তবে চলতি বছরের জন্য উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস করা হয়েছে। পূর্বাভাস অনুসারে, ২০১৯ সালে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো গড়ে ৪ শতাংশের কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তবে ২০২০-২১ সালে প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির অবনতি ঘটেছে ভারত, মেক্সিকো ও জার্মানির।
এদিকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতি শিথিল ও দীর্ঘমেয়াদি সুদহারের উল্লেখযোগ্য কর্তনের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক ধাক্কা আংশিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের সরকারি বন্ড ইল্ড দশমিক ৬ থেকে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে কমতে দেখা যাচ্ছে। গত বছরজুড়ে উন্নত অর্থনীতিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইল্ড গড়ে ১ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি হ্রাস পেয়েছে। মন্থর অর্থনীতির কারণে এখন পর্যন্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ও বাণিজ্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভোক্তা ও সেবা খাত তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী রয়েছে।
২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে বছরওয়ারি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর দেশটির জিডিপি ২ থেকে ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস করেছে ইউরোমনিটর।
এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের মন্থরগতি অব্যাহত রয়েছে। ২০২০-২১ সালে দেশটির বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫-৬ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে চীনের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস হ্রাস করা হয়েছে।
চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতি ভারতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ছয় বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়াতে দেখা গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির গড় প্রবৃদ্ধি