সুয়েজ খাল: চড়াই-উতরাইয়ের সার্ধশত বছর

বণিক বার্তা ডেস্ক

আজ পূর্ণ হলো সুয়েজ খাল কার্যক্রম শুরুর সার্ধশত বছর। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর যাত্রার পর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক জলপথে পরিণত হওয়ায় খালটিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু যুদ্ধ বিশ্বশক্তিগুলোর নানা শক্তি প্রদর্শনী।

ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযোগ: খ্রিস্টপূর্ব উনিশ শতকের আগে লোহিত সাগর নীলনদের মাঝখানে একটি খাল ছিল, যেটি গিয়ে পড়েছিল ভূমধ্যসাগরে।

অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্বে বিদ্যমান খালটি খনন করেছিলেন তত্কালীন মিসরের শাসক ফারাও সেসোস্ট্রিস তৃতীয়। খালটির সমস্যা ছিল, তা বর্ষা মৌসুম ছাড়া ব্যবহার করা যেত না, কারণ তখন নাব্যতা থাকত না। এছাড়া অন্য ঝামেলা ছিল, তা নিয়মিত ড্রেজিং করতে হতো। দীর্ঘ ব্যবহারের পর এটি পরিত্যক্ত হয় অষ্টম শতকে।

ফরাসি কূটনীতিবিদদের অবদান: ইউরোপ এশিয়ার মধ্যে সংক্ষিপ্ত পথ তৈরির জন্য ষোড়শ শতাব্দী থেকে অনেকগুলো পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। দুই মহাদেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে ভূমধ্যসাগর লোহিতসাগরের মধ্যে সদা নাব্যতা থাকে এমন একটি জলপথ তৈরি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উনিশ শতকের মাঝামাঝি বহু কাঙ্ক্ষিত খালটি খননের একটা সম্ভাবনা দেখা দেয়। ১৮৫৪ সালে ফরাসি কূটনীতিবিদ ফার্দিনান্দ ডি লেসেপস মিসরের নতুন শাসক সাইদ পাশার সঙ্গে সুয়েজ খনন নিয়ে আলোচনার শুরু সুযোগ পান। অব্যাহত তদবিরের পর স্বপ্নের সুয়েজ খাল খননের অনুমোদন পান লেসেপস।

যেভাবে খনন হলো সুয়েজ: সুয়েজ খাল খননের জন্য ডি লেসেপস ১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেনসুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি অর্থায়নের জন্য কোম্পানিটি শেয়ার ছেড়ে ছিল। শেয়ারের অর্ধেক কিনেছিল মিসরের শাসক।

অনেক প্রতিকূলতা শেষে ১৮৫৯ সালে শুরু হয় সুয়েজ খাল খননের কাজ। প্রথম দিকে শ্রমিকরা গাঁইতি বেলচা দিয়ে খননের কাজ চালালেও পরবর্তীতে বাষ্পীয় কয়লা চালিত যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করা হয়। খননকাজে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক।

১০ বছর খননকাজ শেষে ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় বহু যুগের বহু প্রত্যাশার সুয়েজ খাল। তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজোনি ডি মন্টিজোসহ পোর্ট সাইদের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক নামজাদা ইউরোপীয়।

আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ: দেনাগ্রস্ত মিসরের শাসক সাইদ পাশা ১৮৭৫ সালের নভেম্বরে নিজেদের সব শেয়ার ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে কোম্পানির শেয়ারের বাকি অংশ ফরাসি সরকারের হাতেই থাকে।

তবে খালটির দখল নেয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রধান বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অবশেষে বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে ১৮৮৮ সালে সম্পাদিত হয়কনস্টান্টিনোপল কনভেনশন কনভেনশনের পর খালটি আন্তর্জাতিক জলপথের মর্যাদা পায়। যুদ্ধ বা শান্তি যা- বিরাজ করুক না সারা বছর জাহাজ চলাচলের জন্য খালটি উন্মুক্ত রাখতে সম্মত হয় চুক্তিতে সইকারী দেশগুলো। তবে চুক্তির প্রতিজ্ঞা সদা মেনে চলা সম্ভব হয়নি। দুটি বিশ্বযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময় খালটি বন্ধ থেকেছে। স্মর্তব্য, গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়েও কনভেনশনে সই করা থেকে বিরত থাকে মিসর।

সুয়েজ সংকট: যাত্রার সার্ধশত বছর পাড়ি দিতে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সুয়েজকে। ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে খালটি জাতীয়করণ করেন। নীলনদের আসওয়ান বাঁধ তৈরির অর্থ উত্তোলনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

নাসেরের এমন সিদ্ধান্তের জবাবে ব্রিটেন, ফ্রান্স ইসরায়েলের সম্মিলিত শক্তি মিসরে হামলা চালানোর আঁতাত করে। ত্রয়শক্তির এমন আঁতাতে মহাসংকটে পড়ে সুয়েজ। প্রসঙ্গত, মিসরের

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন