বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষে কোক, নেসলে ও পেপসি

বণিক বার্তা ডেস্ক

অগণিত প্লাস্টিক কনা পৃথিবীকে বিপন্ন করে তুলছে, তার জন্য হাতেগোনা গুটিকয় বহুজাতিক করপোরেশেন দায়ী বলে জানিয়েছেব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিকস’ (বিএফএফপি) নামের একটি সংগঠন। পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি ও সংগঠনের জোটটি শীর্ষ প্লাস্টিক বর্জন উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবে কোকা-কোলা, নেসলে ও পেপসির নাম উল্লেখ করেছে, যারা নিজেদের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অধিকাংশ ক্ষেত্রে এড়িয়ে যায়। খবর এএফপি।

মাসখানেক আগেবিশ্ব পরিচ্ছন্নতা দিবস উপলক্ষে জোটের স্বেচ্ছাসেবকরা বিশ্বের ৫১টি দেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এসব প্লাস্টিক পণ্যের ৪৩ শতাংশের ব্র্যান্ডের নাম শনাক্ত করা গেছে।

দুই বছর ধরে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে আসছে বিএফএফপি। টানা দ্বিতীয় বছর বিএফএফপির তালিকায় শীর্ষ স্থানে কোকা-কোলার নাম দেখা গেছে। দ্বিতীয় বর্ষে চার মহাদেশের ৩৭টি দেশে পরিচালিত পরিচ্ছন্ন অভিযানে শুধু কোকা-কোলার প্লাস্টিক পণ্যের বোতল বা মোড়ক পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৭৩২টি, যা পরবর্তী শীর্ষ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী তিন কোম্পানির সম্মিলিত বর্জ্যের চেয়ে বেশি।

বুধবার ম্যানিলায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেকগুলো বহুমুখী করপোরেশন পরিবেশবান্ধব পণ্য বাজারজাত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বেশির ভাগ কোম্পানি তা মেনে চলে না। অধিকাংশ কোম্পানি মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতেই পণ্য বাজারজাত করে। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বিপর্যয়ের জন্য বহুমুখী করপোরেশনগুলোকেই এক নম্বরে দায়ী করেছে বিএফএফপি।

জাতি হিসেবে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকা সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য সাগরে ফেলে। সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টিতে শীর্ষে থাকা দেশের সবগুলো এশিয়ার হলেও এসব দেশ যেসব কোম্পানির পণ্য ব্যবহার করে, তাদের সবগুলোর সদর দপ্তর ইউরোপে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।

গত কবছরে বিএফএফপির স্বেচ্ছাসেবকদের সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্যে শীর্ষে রয়েছে কোকা-কোলা, পেপসি ও নেসলের নাম। শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মন্দেলেজ ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিলিভার, মারস, পিঅ্যান্ডজি, কোলগেট, প্যালমোলিভ, ফিলিপ মরিস ও পারফেটি ভ্যান মেলি।

ভোগ্য ব্র্যান্ডের বহুজাতিক করপোরেশনগুলো পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টিতে নিজেদের দায় স্বীকার করলেও সৃষ্ট সমস্যার সঠিক সমাধানের বদলে ভুল সমাধান বের করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর সমস্যা সমাধানের বিভ্রান্তিকর পদ্ধতি ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের সর্বত্র।

কোম্পানিগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের সমাধান হিসেবে পুনর্ব্যবহারের (রিসাইকেল) প্রচারণা চালায়। এটিই নিজেদের দায় মোচনের পথ মনে করে কোম্পানিগুলো। এদিকে সমীক্ষা বলছে, ১৯৫০ সাল থেকে বিশ্বে যত প্লাষ্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে তার মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের আওতায় আনা গেছে।

বিএফএফপির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মোড়কের পণ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বেশি জনপ্রিয়। আর্থিক অবস্থার কারণে এসব দেশের মানুষ বড় ভোগ্যপণ্যের প্যাকেটের বদলে ছোট ছোট প্লাস্টিক মোড়কের পণ্য ব্যবহার করে বেশি। এসব প্লাস্টিক মোড়ক পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিএফএফপির প্রতিবেদনে।

বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোকা-কোলা ও পেপসির প্লাস্টিক বোতল সাগরে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ কোম্পানি দুটি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল বা মোড়ক ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি প্রচারণা চালায়। প্রতিবেদনটি বলছে, এসব কোম্পানি পুনর্ব্যবহারের কথা বললেও তা (পুনর্ব্যবহারের ধারণাটি) সমস্যার মূলে যেতে পারছে না। অন্যদিকে নেসলে দৈনিক এক কোটিরও বেশি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মোড়কের পণ্য বিক্রি করলেও এসব মোড়ক কীভাবে যথাযথভাবে পুনর্ব্যবহারের আওতায় আনা যায়, সেটির সঠিক কোনো পরিকল্পনা কোম্পানিটির নেই।

এদিকে নেসলের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের সমাধান কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এমন একদিন আসবে, যখন আজকের প্রতিবেদনগুলো অতীতের কোনো একদিনের বলে গণ্য হবে। এ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য ও পানীয় কোম্পানি হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই সমাধান বের করতে আমাদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা যথাযথভাবে সতর্ক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন