রঙ হয়ে ফিরে আসে রক্তমাখা দিন

মুহম্মদ আল মুখতাফি

কামানের সামনে বাঁধা বিদ্রোহী সিপাহি-জনতা শিল্পী: অরলান্ডো নোরি, ছবি: ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়াম

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের ঠাঁই দেয়া হয়নি। মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ভাগ্য যেন তাকেই সত্যায়ন করেন। উর্দু সাহিত্যের সফল ধ্রুপদী কবিদের একজন তিনি। মোগল শাসনের শেষতম সম্রাট হওয়ার তকমা প্রায়ই প্লেটোর কথা মনে করিয়ে দেয়। অবশ্য মোগল সাম্রাজ্যকে তিনি পেয়েছিলেন সবচেয়ে দুর্বল আর ভঙ্গুর অবস্থায়। ব্রিটিশদের তখন আধিপত্যের মৌসুম। তার পরও ১৮৫৮ সালের মে মাসে যখন তামাম ভারত ফুঁসে উঠল; তখন তারা সামনে এনেছিল বাহাদুর শাহকে শক্তিশালী করার শপথ। সে আগুন পরে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ভারত। ১৮৫৭ সালের সিপাহি-জনতার সে বিদ্রোহকে ইতিহাসে আজাদি আন্দোলন বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন বলে মনে করা হয়। আজাদি আন্দোলন পশ্চিমা শাসকদের যেমনটা অনুরিত করেছিল; একইভাবে অনুরিত করেছিল শিল্পীদের। তারা নানা সময়ে নানাভাবে চিত্রিত করে গেছেন সংগ্রামের সেই দৃশ্যকে। 

সিপাহী-জনতার সেই বিদ্রোহের শিল্পকর্মরূপ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবার আগে আসে ‘দ্য ক্যাম্পেইন ইন ইন্ডিয়া ১৮৫৭-৫৮’-এর নাম। এটি একটি লিথোগ্রাফ সিরিজ, যা তৈরি করেন ব্রিটিশ চিত্রকর উইলিয়াম সিম্পসন, ই ওয়াকার, জর্জ ফ্রাঙ্কলিন অ্যাটকিনসন এবং আরো কয়েকজন শিল্পী। ২৬টি লিথোগ্রাফ নিয়ে সিরিজটি প্রকাশ হয় সেই উত্তাল দিনগুলোতেই। সিরিজটিতে ভারতীয়দের আন্দোলন ও তাদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর বিভিন্ন সংঘাত উঠে এসেছে। তবে ভেতরের আলোচনা মূলত ব্রিটিশ বক্তব্যেরই প্রতিনিধিত্ব করে, উপেক্ষা করা হয়েছে ভারতীয় দৃষ্টিকোণকে। 

সেই সংঘাতের দিনগুলোকে তুলে আনেন আলফ্রেড পিয়ার্স। এই ব্রিটিশ চিত্রকর ও লেখকের আঁকা পরিচিত চিত্রকর্ম, ‘দ্য সিজ অব দিল্লি’। এছাড়া মার্ক চার্মস এবং হেরি পেইনও পরিচিত হয়ে আছেন তার পরিচিত কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে। 

স্ট্যানলি উড, হেনরি দুপ্রে ও ডেভিড রাউল্যান্ডস প্রত্যেকেই নিজের মতো করে এঁকেছেন অস্থির সেই দিনগুলোকে। যেন ডায়েরি লিখে রেখে গেছেন কেউ। লাখ লাখ কৃষক, কারিগর এবং বিশেষ করে সৈনিকরা এক বছরের বেশি সময় ধরে যেভাবে তাদের অসম সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন; তা মহাকাব্যিক। সেই মহাকাব্যিক প্রতিরোধ ও সংঘাত স্ট্যানলি উড কিংবা হেনরি দুপ্রের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। একইভাবে বেক ফ্রেরেস ও আরডি মোরেনের তৈরি লিথোগ্রাফের কথাও সামনে আনা যায়। আন্দোলনের স্মৃতিকে জীবিত করে দেয় স্টর্মিং দ্য কাশ্মীর গেট অ্যাট দিল্লি। 

সামরিক বিষয়গুলোকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন বিখ্যাত চিত্রকর অরলান্ডো নুরি। ব্রিটিশদের নৃশংসতা উঠে এসেছে নুরির জলরঙে। ১৫০ বছরের বেশি সময় পরেও আজও সে সব চিত্রকর্ম মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন