সাক্ষাৎকার

বাঙালিত্ববাদীদের বিশুদ্ধতা খোঁজার প্রবণতাকে জেন-জি অতিক্রম করে ফেলেছে

ছবি: ইমতিয়াজ আলম বেগ

শিল্পী মোস্তফা জামান ১৯৬৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন শিল্প সমালোচক। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর জন্য ইংরেজি বাংলা উভয় ভাষায় অসংখ্য শিল্প সমালোচনা, শিল্পকলাবিষয়ক প্রবন্ধ লিখছেন। ২০১০ থেকে ২০১৭ সালে তিনি দৃশ্যশিল্পবিষয়ক ম্যাগাজিন ডেপার্ট-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিজস্ব শিল্পচর্চা ছাড়াও তিনি দেশে অনেক উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন। দেশে বিদেশে অনেকগুলো একক যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। আন্তর্জাতিক শিল্পবিষয়ক ম্যাগাজিনেও প্রকাশ হয়েছে তার লেখা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দেশের শিল্পচর্চার রাজনীতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মো. বজলুর রশিদ শাওন

আমরা সাধারণত দেখি শিল্পীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের বক্তব্য শিল্পের মাধ্যমেই তুলে ধরেন। কিন্তু আপনার নেতৃত্বেগণহত্যা নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ-এর ব্যানারে তরুণ শিল্পীরা একত্র হলেন এবং তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরলেন, যেখানে সরাসরি সরকারের পদত্যাগের দাবিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিল। কোন বাস্তবতা মাথায় রেখে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আপনারা সরকার পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করলেন?

প্রথমত, আমি একা নই, এটা আসলে আমাদের শিল্পীদের একটা গোষ্ঠীচেতনার ফল। এখানে স্পষ্ট করা প্রয়োজন, কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে তেমন কিছুই জানতাম না। শুরুতে আমার মনে হয়েছিল এটা আসলে সরকারের একটা প্ল্যান। ভারতের সঙ্গে হাসিনা সরকারের চুক্তির ইস্যুতে সমাজে চলমান আলাপগুলোকে ডাইভার্ট করার জায়গা থেকেই এটাকে আলোচনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা ধরনের ফ্যাসিবাদী সরকারগুলো যেভাবে মূল বিষয়গুলোকে আড়াল করতে নতুন নতুন সংকট সামনে নিয়ে আসে এটাও সে রকমই আরেকটা প্রক্রিয়া মনে হচ্ছিল। কিন্তু যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় হাসিনা সরকারের পুলিশ তার পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগকে মাঠে নামিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার শুরু করল তখন ব্যাপারটা গুরুত্বসহকারে খেয়াল করতে শুরু করলাম। বিশেষ করে যখন নির্বিচারে হত্যা শুরু করল তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদেরও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের শিল্পীদের সম্মিলিত স্বর প্রকাশ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা থেকেইগণহত্যা নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ-এর নামে আমরা আমাদের পরিকল্পনা শুরু করি।

এক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট ছিল। সেটা হলো শিক্ষার্থীদের অভিভাবক শিল্পীসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ভারতের সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের পক্ষে নানাবিধ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি আন্দোলন চলাকালে আমরা যখন রাস্তায় তখনো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক শিল্পীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, যেটা শিল্পীসমাজের অংশীজন হিসেবে আমরা সমর্থন করি না। ফলে সেটার বিপক্ষে শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে আমরাও স্পষ্ট অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেছি।

চারুকলার শিক্ষক শিল্পীদের প্রতিনিধি হিসেবে যারা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা তো নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন। তাদের রাজনীতিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অনেক দিন ধরেই আমাদের দেশে একটাএপিস্টেমিক ব্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে এমন একটা ন্যারেটিভ/বয়ান দাঁড় করানো হয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন দলগতভাবে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই। আরো স্পষ্ট করে বললে এক ব্যক্তির অর্জন। যেনবা আর কোনো দল বা গোষ্ঠীর কিংবা মানুষের অবদান সেখানে ছিল না। এমনকি গত ১৫-১৬ বছরের কর্মকাণ্ড খুব নিবিড়ভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় যে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি অন্যান্য বড় নেতার নাম ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকেও মুছে ফেলেছে প্রায়। মওলানা ভাসানী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন আহমদ পর্যন্ত, যিনি নয়টা মাস মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন, তাকেও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছে তারা। অথচ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী থেকে শুরু করে অসংখ্য রাজনৈতিক দল ব্যক্তি মানুষের অবদান ছিল মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভে তাদের কারো স্থান নেই।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র-জনতাকে যেভাবে হত্যা করা হলো তাতে আমাদের আবারো নতুন করে ভাবতে হয়েছে রাজনীতির আদ্যোপান্ত এবং এর সাংস্কৃতিক মূল আসলে কোথায়? বাঙালি সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য বলতে আসলে তারা কী বোঝাতে চায়?

ঢাকা চারুকলার চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়েই এখানকার শিক্ষক-শিল্পীদের রাজনৈতিক অবস্থান বের করতে পারি। আমরা যদি চারুকলার মাধ্যমভিত্তিক শিল্পচর্চার দিকে তাকাই তাহলে খুব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে ধারাটা মূলত ঔপনিবেশিক, যেটা গ্রামীণ কিছু উপাদান নিয়ে দেশজ চরিত্র নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে বহুদিন ধরে এবং তারা দাবিও করেন এটাই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এসব নিয়ে আগেও আমরা বিরোধিতা করেছি, বিভিন্ন সময়ে বলেছি যেমন ডেপার্টে (ত্রৈমাসিক আর্ট ম্যাগাজিন) আমরা এগুলো নিয়ে লিখেছিও। এই যে সংস্কৃতির কথা বলা হয় সেখানে ধর্মের জায়গাটা কোথায়? আমাদের সংস্কৃতিতে হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ সব ধর্মই পরিষ্কারভাবে হাজির আছে। লালন ফকির যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। অর্থাৎ ধর্ম সমস্যা না। কিন্তু ধর্মকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সেকুলারিজমের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো। আসলে ধর্মটা যে শেখানো হলো না কিংবা ব্রাহ্মণ্যবাদ আর হিন্দু ধর্ম এক করে ভাবা হলো সেটাই যে মূল সংকটের উৎস তা আড়াল করা হলো। ইসলামকে ভাবা হলো একধরনের বস্তুবাদী ইসলাম বা শুধু মসজিদকেন্দ্রিক ইসলাম। ইসলাম এখানে সুফিদের দ্বারা প্রচারিত এবং সেই সুফিদের ব্যাপারেও গোষ্ঠীর প্রচণ্ড উষ্মা লক্ষ্য করা গেল। সুফিদের অনেক মাজারও ভেঙে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, কিন্তু সেটা নিয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করে না। তাদের প্রতিবাদ শুধু নামকাওয়াস্তে মাইনরিটি কমিউনিটির ওপর অত্যাচার নিয়ে হয় যে এদের বাঁচাতে হবে, সেটা তো আমরাও চাই। তাহলে মাইনরিটি কমিউনিটিকে আলাদা করা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশের সব নাগরিকের তো সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কথা। আরেকটা দিক হচ্ছে জাতিকেন্দ্রিকতা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক অদ্ভুত চেহারা দেখলাম। যেখানে ঘোষণা দিয়ে বলা হতো আপনি যদি আপনার সন্তানকে জঙ্গি বানাতে না চান তাহলে বাঙালিত্ব শেখান। বাঙালি সংস্কৃতির দিকে নিয়ে আসেন। আমরা কী দেখলাম? বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে হেলমেট বাহিনী হাজির হলো। মূলত এরা নাৎসিবাদীদের মতো বিশুদ্ধতাবাদী। এটাই যদি বাঙালিত্ববাদিতা হয় তো এটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান নেয়াটা জরুরি মনে করলাম।

আন্দোলনের কোন চরিত্রটি বিশেষ মনে হয়েছে আপনার এবং সারা দেশে আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলন-পরবর্তী যেসব দেয়ালচিত্র অঙ্কন, স্লোগান দেখা গেল সেগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আন্দোলনের মূল বক্তব্যের দিকে যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন আন্দোলনকারীরা পাহাড় থেকে সমতল সবার অধিকার নিয়ে সরব হয়েছিল। ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি জাতিনিরপেক্ষতার দাবিও প্রধান হয়ে উঠে এল আন্দোলনে। এমনকি আন্দোলনে বিভিন্ন ভাষার স্লোগান খেয়াল করলাম আমরা, যেটা বাঙালিত্ববাদীরা পছন্দ করেনি। মানে সবখানে তাদের যে বিশুদ্ধতা খোঁজ করার প্রবণতা সেটা কিন্তু এই জেন-জি অতিক্রম করে ফেলেছে। তারা বিশুদ্ধবাদিতাকে রুখে দিয়েছে। এটাই ছিল আন্দোলনের মূল স্পিরিট।

দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতির কিন্তু দুটি ধরন ছিল। অর্থাৎ আন্দোলন চলাকালে একধরনের ইমার্জেন্সি অ্যাস্থেটিক বা আপৎকালীন নন্দন দেখলাম আমরা, যেটা অনেকটা যুদ্ধাবস্থায় খুব দ্রুত কিছু একটা এঁকে বা লিখে চলে যাওয়ার মতো ব্যাপার ছিল। এটাকে নন্দন হয়তো বলা যাবে না, বরং অ্যান্টি-নন্দন বা বিরোধী নন্দন বলা যায়, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি হাজির করল। কিন্তু আগস্ট-পরবর্তী যেসব দেয়ালচিত্র দেখলাম সেগুলো ভিন্ন ধাঁচের। কারণ ওরা বুঝে গেল আমরা জয়ী স্বৈরাচার পালিয়েছে। তখন যেসব গ্রাফিতি করা হলো সেখানে আরেক ধরনের নন্দন দেখা গেল, যেখানে আগের মেজাজও কিছু ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল। যেমন নটর ডেম কলেজের সামনের দেয়ালে গ্রিক মিথোলজির একটা ঘটনার চিত্রায়ণ করল। আঁকা সুন্দর কিন্তু সেটাকে ইমার্জেন্সি অ্যাস্থেটিকের মধ্যে ফেলা যায় না। এবার যেহেতু তারা তাদের বক্তব্য পুরোপুরি তুলে ধরার সুযোগ পেল, সেখানে আমরা খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম ধর্মনিরপেক্ষতা জাতিনিরপেক্ষতার স্লোগান। পর্বে আমরা আরেকটা বিতর্ক দেখতে পেলাম, সেটা হলো অনেকেই আগের লেখা বা ছবির ওপরে আরবি ক্যালিগ্রাফি লিখেছেন। আরবি লেখা এখনো আমাদের সমাজের অনেকেই নিতে পারেন না, কিন্তু তারা এটাও জানেন না নাকি স্বীকার করতে চান না যে শিল্পকলা একাডেমিতে এই আওয়ামী লীগের সময়েই বিভিন্ন দেশের অর্থ সহায়তায় ক্যালিগ্রাফির ওয়ার্কশপ হয়েছে। সেগুলোর প্রদর্শনীও হয়েছে এবং সেখানে আমিও ক্যালিগ্রাফির ওপর সেমিনার পেপার পড়েছি। তো এই ক্যালিগ্রাফির ওয়ার্কশপ, প্রদর্শনীর সঙ্গে যেসব শিল্পী ছিলেন তারাও তো তাদের নন্দন প্রকাশ করতে চাইবেন। কিন্তু এদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এরা অতিরিক্ত সৌন্দর্যবোধতাড়িত। আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেয়ালে কিছু একটা লিখে খুব দ্রুত পালিয়ে যেতাম, অনেক সময় পুরোটা লিখতেও পারতাম না। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নের মতো সংগঠনের কর্মীদের দেখেছি একটা নিরাপদ জায়গায় সারা দিন ধরে খুব সুন্দর করে কিছু একটা লিখছে। তো এই ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্যটা আসলে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের দেয়াললিখনের সঙ্গে মিলে যায়। যেটা মোটেও ইমার্জেন্সি অ্যাস্থেটিক নয়। বরং আন্দোলন চলাকালে কোরআনের এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো স্বৈরাচার বা জালেমের পতনের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়, সেগুলো যদি লেখা হতো তাহলে বরং আরো ভালো হতো। যেমন আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিপক্ষে লড়ছে, কিন্তু শেখ মুজিবেরদাবায়ে রাখতে পারবা না রকম উক্তি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনায়াসে ব্যবহার করেছে। যেটা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। ফলে এখানে দুইটা ভাগ খুব স্পষ্ট ছিল আন্দোলন-পূর্ববর্তী পরবর্তী গ্রাফিতির মধ্যে। এমনকি অনেক গালিও রয়েছে এর মধ্যে। ফলে সৌন্দর্যচর্চার বিপরীতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সময় যে গ্রাফিতিগুলো করল সেখানে বক্তব্য খুব স্পষ্ট। ওরা যা চায় সেটাই লিখেছে, একটুও বাড়তি কিছু ছিল না এর মধ্যে।

(সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ পরের সংখ্যায়)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন