প্রদর্শনী

মৃত্তিকায় মায়ায়

হাসনাত মোবারক

ছবি: লেখক

সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের বিকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু করে কয়েকটি পরিচিত প্রাঙ্গণে ঢুঁ মারলাম। দেখে মনে হলো নগর ঢাকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো যেন প্রাণোচ্ছ্বাসে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে একজন ফোনে জানালেন, তরুণ চিত্রশিল্পী অমিতাভ সরকারের একক প্রদর্শনী চলছে কলাকেন্দ্রে। ছুটলাম লালমাটিয়ার ডি-ব্লকের ৯/৪ নম্বর বাড়িতে। এ শিল্পালয়ের সামনের ঝাপড়া নিমগাছটা প্রাঙ্গণটি চেনাতে আমাকে সহায়তা করে। গল্পটা যখন রিকশায় বসে করছি। তত সময়ে ত্রিচক্রযানটি ডি ব্লকের মাথায়। ধীরগতিতে চলছে। এমন সময়ে দুই কিশোরকে গলাগলি করে হাঁটতে দেখি। তাদের কাছে জানতে চাই কলাকেন্দ্রটা সামনেই না? কিশোরদ্বয়ের চটপট উত্তর নামই তো আজ প্রথম শুনলাম।’ এক মিনিটের মাথায় আমরা কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাই। ওই দুই কিশোরও কিছু সময় পর আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ডেকে বললাম, এটাই সে জায়গা। ওদের মুখে সলজ্জ হাসি। প্রসঙ্গের বাইরের কথা তুললাম এ কারণেই এখানে যে প্রদর্শনীটা চলছে তার নামও ‘‌অ/প্রাসঙ্গিক’। আসলে পৃথিবীর কোনো কিছুই শিল্পের বাইরের নয়। সে আলাপ আপাতত থাক।

ঢুকে পড়ি আমরা অমিতাভ সরকারের শিল্পের বারান্দায়। শিল্পাঙ্গনের চার কক্ষবিশিষ্ট গ্যালারিজুড়ে খেলা করছে বিকালের হলুদ আলোর সঙ্গে আলো-আঁধারির ঢেউ। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে ফুটে উঠেছে গাঢ় সবুজ বৃক্ষের আদল। এ আদল অন্য কারো নয়, যা আমার দেশের, মায়ের জল— কাঁদার জমিন। সহজ করে বললে যা প্রাকৃতিক দৃশ্যের বন্দনা।

অমিতাভের ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমের কাজে দেখা যায় টেক্সারই মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে। একটু সময় নিয়ে এ কাজগুলো দেখলে চিত্রকর্মগুলো একেকবার একেক রূপে ধরা দিচ্ছে। কখনো হৃদয়বৃত্তিক অনুভূতির প্রকাশ; আবার দেখা যাচ্ছে এ তো শুধু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। কোনো কোনো ক্যানভাস তো বিষণ্নতায় ভরা দৃশ্য কল্পের গল্প বলে যাচ্ছে।

আসলে এ চিত্রকর্মগুলো কি বিমূর্ত! শিল্পকলা আসলে কী? সহজ কথায় উপস্থিত হলাম হাজার রূপে শিল্পরসিক বুঝে নেবেন যেমনটি।

অমিতাভের শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অস্তিত্বের উপলব্ধি একটি ক্ষণস্থায়ী জৈবিক ঘটনা। আমাদের মনন-মেজাজ, অনুভূতি উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা ক্ষণস্থায়ী। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে, যাপিত জীবনের অস্তিত্বের সংশয়-সংকট তৈরি করে, যা উদযাপনে প্রকাশ স্বাভাবিকভাবেই যেন ধাবিত হয় বিমূর্ততায়।’

একক এ প্রদর্শনী ৪৩টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে। কোনো ছবিরই নাম দেয়া হয়নি। প্রদর্শনীর দেয়ালে ঝুলে থাকা শিল্পকর্মগুলো দেখছেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাহিয়া তাবাসসুম। চিত্রকর্মগুলো তার কেমন লেগেছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘মাটির কাজগুলো মূলত ভালো লেগেছে। কিছু ছবিতে যেমন মানুষের মুখাবয়ব ফুটে উঠেছে। আবার সে ছবিটিই আরেক পাশ থেকে দেখে মনে হচ্ছে একটি গাছ।’ সত্যি এ শিল্পীর শিল্পকর্ম নতুন ভাবনার সন্ধান দেয়।

যার শিল্পকর্ম নিয়ে এ আয়োজন তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ কাজগুলো মূলত আমার জীবনের জার্নি। এখন কাজগুলো একই ছাদের নিচে সজ্জিত দেখে মনে হচ্ছে এ তো জীবনের বাঁকবদলের গল্প।’

গত ৩০ আগস্ট শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত এ শিল্পগৃহ। একবার ঘুরে আসতে পারেন। এখানে কর্মশিল্প সংগ্রহেরও সুযোগ রয়েছে। সংগ্রাহকরা চাইলে প্রদর্শনীর শেষে নিজের সংগ্রহ করা শিল্পকর্মটিতে শিল্পীর স্বাক্ষরও নিতে পারবেন। প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন শার্মিলি রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন