সুলতান ইসতিয়াকের ক্যানভাসে উত্তাল দিনগুলো

ফারিহা আজমিন

হিস্টােরিক ‘‌৩৬ জুলাই’: মার্চ টু ঢাকা

প্রতিবাদ, প্রতিরোধের অন্যতম ভাষা চিত্রকর্ম। পৃথিবীজুড়ে যেকোনো বিপ্লব, আন্দোলন সবকিছুতেই চিত্রকর্মের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ছবি যেন বিপ্লবকে আরো দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়। তেমন চিত্রই ফুটে উঠেছে এ বছরের জুলাইয়ে। জুলাইজুড়েই চলেছে কোটা আন্দোলন। প্রথমে রাজধানী এরপর পুরো দেশে ঘটেছে জুলাই বিপ্লব। দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও নানা কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সাধারণ জনতা। এরপর চিত্র পাল্টেছে আন্দোলনের। বলা যায় ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থী হত্যা যেন আন্দোলনের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তার পরও জাতি সাক্ষী হয়েছে একের পর এক প্রাণহানির। এ পরিস্থিতি জনমনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে জাগিয়ে তুলেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তাক্ত ছাত্র-ছাত্রী, রংপুরে আবু সাঈদ, ঢাকায় মুগ্ধ, ফরহাদ ও আরো অনেক হতাহত হওয়ার ঘটনা ক্ষুব্ধ করে তোলে সাধারণ মানুষকে। এভাবেই একদিকে এগিয়ে চলেছে আন্দোলন। অন্যদিকে চলেছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর বর্বরতা ও নির্যাতন।

এ বাংলাদেশকে ক্যানভাসে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী সুলতান ইসতিয়াক। এঁকেছেন জুলাইয়ের বাংলাদেশ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় ও স্বৈরশাসকের পতনের পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যে বিজয় মিছিল হয়েছিল সে বিষয়বস্তুগুলো নিয়েও এঁকেছেন শিল্পী ইসতিয়াক। শিল্পী বলেন, ‘দেশের এ পরিস্থিতিতে সে সময়ে আমার মনে হয়েছে এখনই আমার এ ছবিগুলো আঁকা প্রয়োজন। মানুষের মনে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনা জাগরণের যথার্থ সময় এটিই। তাই অনেক সময় নিয়ে আমি কোনো ছবি আঁকিনি।’

তিনি আরো জানিয়েছেন, ১৬ জুলাই থেকেই তিনি কোটা আন্দোলন ও এর পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ছবি আঁকা শুরু করেন। অ্যাক্রেলিক রঙের ব্যবহারে ক্যানভাসে প্রতিটি ছবি এঁকেছেন তিনি। সুলতান বলেন, ‘অন্য কোনো রঙ ব্যবহার করলে ছবি আরো বেশকিছুটা সময় নিয়ে আঁকতে হতো। তবে আমার মনে হয়েছে আবু সাঈদ, মুগ্ধকে যদি এখনই আমি না আঁকি তাহলে দেরি হয়ে যাবে। আমি ক্যানভাসের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে এখনই সে স্পৃহাকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম।’

১৬ ও ১৮ জুলাইয়ের শহীদ আবু সাঈদ বা মুগ্ধর ছবির পাশাপাশি এঁকেছেন জনতার বিজয়েরও ছবি। যখন ৫ আগস্ট ছাত্রদের কর্মসূচি ছিল মার্চ টু ঢাকা, সারা দেশ থেকেও এসেছিল কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে যখন চতুর্দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তার পরই ঢাকার রাস্তার চিত্র পাল্টে যায়। কয়েক লাখ মানুষকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিজয় মিছিল করতে দেখা গেছে। লাখো মানুষের সে উল্লাসকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন সুলতান। যে ছবি ছিল ৫ আগস্টের বাংলাদেশ। এভাবেই জুলাই ও আগস্টের শুরুর দিকের দিনগুলোর বেশকিছু সময়ের ছবি এঁকেছেন তরুণ এ শিল্পী। তবে তিনি কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন দেশের এমন বিশাল একটি পরিবর্তন বা এর আগের নির্মমতা সবকিছুই ঝাপসা হয়ে রয়ে গেছে বাংলাদেশের অধিকাংশ চিত্রশিল্পীদের চোখে। সুলতান বলেন, ‘বেশ কয়েকজন কার্টুনিস্ট আছেন যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে ডিজিটাল আর্ট করেছেন। তবে যারা প্রথম সারির চিত্রকর বা চিত্রশিল্পী তাদের কাউকেই তেমন সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায়নি। তাদের অনেকেরই এমন অসংখ্য চিত্রকর্ম আছে দেশের নানা বিষয়বস্তু ঘিরে। তবে এ বিষয়ে তারা কেউ আঁকেননি।’

এছাড়া দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পীকে দেখা গেছে বিমূর্ত আর্ট হিসেবে কিছু ছবি আঁকতে। তবে বেশির ভাগই এ আন্দোলন অথবা বিপ্লবকে ঘিরে শিল্পী সুলতানের মতো ছবি আঁকেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন