বন্যায় চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে দেড় লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চলমান বন্যায় চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর নিয়ে কৃষি অঞ্চলটি গঠিত। এর মধ্যে ফেনীর প্রায় শতভাগ ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতিসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন এ চিত্র উঠে আসে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আবাদ কম হয়। তবে চলতি মৌসুমে আউশে একবার ক্ষতি হওয়ার পরে আমন মৌসুমের শুরুতে যেভাবে ক্ষয়ক্ষতি হলো, তাতে এ অঞ্চলে ধান উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়তে পারে।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই সংকটাপন্ন, সবখানে যোগাযোগ করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত এখনো অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ আক্রান্ত জমির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তবে আগামী কয়েকদিনে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় সেটা পর্যবেক্ষণ করছি।’

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় ১৬-২২ আগস্ট বিকাল ৬টা পর্যন্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনে ফসলের প্রাথমিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১০ হাজার ৬৭৯ হেক্টর, আমন আবাদ ১ লাখ ২ হাজার ৩৬০, বোনা আমন ৫২০, আউশ ২২ হাজার ১৭৫, সবজি ৬ হাজার ৯১৪, ফলের বাগান ২ হাজার ৭২২ এবং আদা, হলুদ, পান ও আখের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৪৮ হেক্টর।

জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।  এর মধ্যে আমন আবাদের ক্ষতি হয়েছে ২৬ হাজার ৬৪২ হেক্টর। এছাড়া সবজি ১ হাজার ৯২২ হেক্টর এবং আদা, হলুদ, আখ ও পানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ১১ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন ১০ হাজার ৫২৫ হেক্টর, আমন বীজতলা ১২১, আউশ ২০১, সবজি ২৪৪ ও  ৪৩ হেক্টর জমির পানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অঞ্চলে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে ৪৩ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন ২৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, বীজতলা ৪ হাজার ৬৮৬, আউশ ৫ হাজার ৩৭৭, সবজি ৩ হাজার ৬৩২, ফলের বাগান ২ হাজার ৪৩২ হেক্টরসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা। জেলাটিতে ৪১ হাজার ৪৮৯ হেক্টর ফসলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৪৭৬ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে আমান আবাদ শতভাগ অর্থাৎ ৩২ হাজার ৪৮৪ হেক্টর, আমন বীজতলা ২ হাজার ৭৩ হেক্টর, আউশ আবাদ ৬ হাজার ৫০ হেক্টর, শরৎকালীন সবজি ৫২৫ হেক্টর, ফলের বাগান ২৩০ হেক্টর, আদা হলুদ ও আখ আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৬ হাজার ৮০০ হেক্টর ফসলের মধ্যে ১২ হাজার ৬৮৬ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নোয়াখালীতে অনেক জায়গায় আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে জলাবদ্ধতার কারণেও ক্ষতিগ্রস্তক হয়েছিল। পানি নেমে গেলে আমরা কিছু নাবি জাতের ধানের বীজতলা করার চেষ্টা করব। সেখান থেকে চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন