গণমাধ্যমকে ঢেলে সাজানো হবে— তথ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি— তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ঢেলে সাজানো হবে। একটা সংস্কার কমিশন করে তারপরে সেটা কমিশনে রূপান্তর করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নীতিমালাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যেন গণমাধ্যমগুলো স্বাধীন মাধ্যম হিসেবে চলতে পারে এবং অবশ্যই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিভিন্ন প্রকল্পের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সকল প্রকল্পের একটা রিভিউ কমিটি করা হয়েছে। যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আছে সেগুলো তদন্ত করা হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কমিটি ছিল, সেগুলোকে বাতিল করে পুনর্গঠন করার কাজ চলছে।  

শহীদদের স্মরণে সভা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, নিহত এবং আহতদের তালিকাটি চূড়ান্ত হলে শহীদদের স্মরণসভা আয়োজিত হবে। এখন পর্যন্ত ৭২৮ জন শহীদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গিয়েছে এবং তাদের ঠিকানা খুঁজে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা ২০ হাজার ২৬৩ জন। এগুলো ভেরিফাই করা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে আগামী রোববারের মধ্যেই একটা চূড়ান্ত তালিকা পাওয়া যায়।

স্মরণসভার বাজেট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পাঁচ কোটি টাকা। নিহতদের পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসাসহ থাকার ব্যবস্থার সিংহভাগ খরচ এই টাকা থেকে ব্যয় হবে।

উপদেষ্টা জানান, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও মীর মাহবুবুর রহমান, কাজী ওয়াকার আহমেদ, মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ উদ্দিন সজীব ভূঁইয়া, নুরজাহান বেগম এবং শারমিন মুরশিদসহ আরো ১৪ জন সাধারণ সদস্য যুক্ত হয়ে মোট ২১ সদস্যের একটি প্যানেল হবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

উপদেষ্টা জানান, মূলত শহীদ এবং আহতদের নিয়ে কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন। আহতদের পুনর্বাসনসহ আরো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো এই ফাউন্ডেশন দেখবে এবং এর সবচেয়ে বড় কাজ হবে স্মৃতি ধরে রাখা।  বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও এই ফাউন্ডেশনে ডোনেট করা যাবে।

বিভিন্ন নীতিমালার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনাব নাহিদ ইসলাম বলেন, যে ধারাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেলো সংশোধন করে হবে, নাকি পুরো আইনটাই বাতিল করা হবে,তা যাচাই-বাছাই পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো আইন যেন গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটা খেয়াল রাখা হবে।

প্রশাসনের বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসনে স্থবিরতা আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি এবং যেহেতু অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করছি, সমস্যা আসছে, আন্দোলন আসছে, দাবি দাওয়া আসছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের স্থবিরতা কেটে যাবে।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গুমের জন্য তদন্ত কমিশন করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিকদের যে হয়রানি হয়েছে, সেটা বিবেচনা করা হবে। একইসঙ্গে ১৬ বছর ধরে যে মামলাগুলো ছিল, সেগুলো কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের নামে মামলা করা হচ্ছে। নিরপরাধ কোনো সাংবাদিক যেন ভুক্তভোগী না হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করে মামলা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলার ঘটনা ঘটেছে, যা সমর্থনযোগ্য নয়।

উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের এমনকি সরকারের দায়িত্বে থাকা অনেকের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অনেক অন্যায় সুযোগ-সুবিধা নেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে কোথাও কোনো ধরনের অন্যায় করার চেষ্টা করলে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারের জায়গা থেকে পুলিশকে আরো বেশি কর্মতৎপর করতে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন উপদেষ্টা। বিগত সরকারের শাসনামলের ১৬ বছরে পুলিশ এবং প্রশাসনকে জনগনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশ এখনো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়াতে পারছে না এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। পুলিশদের বিভিন্ন ক্ষোভের বিষয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ১৬ বছর তাদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং আবার যেন তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয় বা বিরোধী দল দমনে অথবা আন্দোলন ব্যবহার না করা হয় সেই জন্য পুলিশ স্বায়ত্তশাসন চাচ্ছে, সংশোধন চাচ্ছে। পুলিশ বাহিনী থেকে প্রস্তাবনা এসেছে এবং কমিশন এই কাজটি করবে। আন্দোলনের  পুরা সময়টায় পুলিশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের একটা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কখনোই জনগণের বিপক্ষে যেন আর দাঁড়াতে না পারে, সে বিষয়ে নীতিমালা করা হবে এবং কমিশন সে প্রস্তাবনা দেখবে। একইসঙ্গে পুলিশ যেন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে সেজন্য পুলিশকে সবরকমের সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।

ব্রিফিংয়ের সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন,ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন