লালমনিরহাটে তিস্তায় জেগে ওঠা চরে আমন আবাদ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তার চরে আমন ধানের খেত ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে লালমনিরহাটে শত শত মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায় তিস্তা নদীতে। গত দুই দশকে পলি জমে তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে চর পড়েছে। জেগে ওঠা এসব চরে বর্ষা মৌসুমের আগে বাদাম, ভুট্টা, সবজি, মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে আসছেন চাষীরা। তিস্তায় এখন পানিপ্রবাহ কমেছে। বছরে তিন-চারবার আকস্মিক বন্যা হলেও সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার বেশি পানিপ্রবাহ থাকে না। নদীভাঙন ছাড়া ফসলের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। বরং বন্যার কারণে সম্পূরক সেচ ছাড়াই চরাঞ্চলে ফসল আবাদ করছেন চাষীরা।

সরজমিনে দেখা দেখা গেছে, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এসব চরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান চাষীরা।

পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পারুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিস্তা নদীতে আমাদের জমি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এখন তিস্তার বুকে যে চরগুলো জেগে উঠেছে, সেখানে আমাদের জমিও রয়েছে। এসব জমিতে ভুট্টার পাশাপাশি কিছু সবজিও উৎপাদন হতো। কয়েক বছর থেকে এসব চরে আমন ধান চাষ করা হচ্ছিল। এখন পরিস্থিতি এমন যে ভালো জমির মতোই আমন চাষ হচ্ছে তিস্তা চরে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের শুধু নয়, অসংখ্য মানুষের জমি যেমন উদ্ধার হবে, তেমনি ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।’

কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী চরের কৃষক রওশন আলী বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তিস্তা নদী কেড়ে নিয়েছে। তিস্তা নদীর বুকেই আমার জন্ম। বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি, এর ভাঙনের কারণে ১৯ বার বাড়ি সরাতে হয়েছে। আমার জীবনে ছয়বার বাড়ি সরিয়েছি। এখন চরে মোটামুটি ভালো আছি। চরটি মূল ভূখণ্ডের মতোই। সব ধরনের ফসল ফলছে। কিন্তু ভয়, কখন তিস্তার ভাঙনে আবার সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। এবার দুই একর জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। গাছও ভালো হয়েছে। ভালো ফলনের আশা করছি।’

ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি উদ্ধার হবে। জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারে তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া জমি। তবে এ নদী শাসন করার জন্য উল্লেখযোগ্য ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তার উজান থেকে ঘোলা পানি বাংলাদেশে আসে। পলি পড়ে তিস্তার তলদেশ দুই দশকে ভরাট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে চর পড়েছে। তিস্তায় পানিপ্রবাহও কমেছে। ফলে প্রতি বছর বর্ষায় তিন-চারবার আচমকা বন্যা হলেও সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পানিপ্রবাহ থাকে না। নদীভাঙন ছাড়া ফসলের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। বরং বন্যার কারণে সম্পূরক সেচ সুবিধা ঘটে চরগুলোয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ডিডি) ড. মো. সাইখুল আরিফিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিস্তার অনেক চর এখন টেকসই। ফলে এগুলোয় এবার সম্পূরক সেচের প্রয়োজন নেই। এখানে আমন ধানের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন অবশিষ্ট জমিতে রবি ফসলের জন্য বেড তৈরির প্রস্তুতি চলছে। 

কোথাও কোথাও বেড তৈরি করে বিভিন্ন সবজির বীজও বপন করা হয়েছে। চরের মানুষের মধ্যে একসময় অভাব ছিল। এখন সে অভাব নেই। কেননা চরের জমিতে এখন ফসল ফলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন