দুদকের শীর্ষ তিন পদে পরিবর্তন কবে

নজরুল ইসলাম

ছবি : বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই জনপ্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা ক্যাডারসহ বিভিন্ন চাকরিতে ব্যাপক রদবদল ঘটছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শীর্ষ তিন পদে গতকাল পর্যন্ত কোনো রদবদল ঘটেনি। দুদকের কেউ কেউ বলছেন, চলতি মাসেই শীর্ষ তিন পদে পরিবর্তন আসতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান কমিশনই থাকবে। 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে একটি কমিশন সভাও হয়নি। ফলে কমিশনে একধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। কোনো মামলা ও চার্জশিটের অনুমোদনও গত মাসে দেয়া হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহ (আজ) থেকে কমিশন সভা শুরু হবে। সেই নির্দেশনা পেয়ে ডেস্ক অফিসাররা কমিশন সভার জন্য ফাইল তৈরি করছেন। মূলত এ কারণে অনেকের ধারণা, কমিশনের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার এখনই বিদায় ঘটছে না। এছাড়া নতুন কমিশনের জন্য এক মাস সময়ও দিতে হয় সার্চ কমিটিকে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কমিশন এখন শুধু রুটিন ওয়ার্ক করছে। এর আগে এক-এগারো সরকার নতুন কমিশন গঠন করে দুর্নীতিবাজদের তালিকা করেছিল। তারপর সেই তালিকা ধরে অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো কমিশনকে কোনো বার্তা দেয়নি। তাই কমিশন কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। 

দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন কমিশনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীও পছন্দের লোক খুঁজছে। অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডারও তাদের প্রভাব ধরে রাখতে চায়। তারা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে প্রার্থী দিতে চায়। পছন্দের লোককে দুদকে বসাতে চায় জুডিশিয়াল সার্ভিসও।’

দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে এমন মানুষকে দেখতে চান, যারা সৎ, উদার ও নির্ভীক। যারা পেশাদারত্ব বজায় রাখবেন; কোনো লোভে পড়বেন না; কমিশনের আইন প্রয়োগে অটল থাকবেন।

বর্তমানে দুদক চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। কমিশনার হিসেবে আছেন মো. জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুন। অনেকেই মনে করেন, এ তিনজন আগের সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। তারা নিরপেক্ষ ছিলেন না। এ কারণে অনেকেই শীর্ষ পদে রদবদল আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

দুদকের সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন গত সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। তারা এখন যেভাবে কাজ করছেন, আগে করতে পারেননি কেন? ওনাদের আগের কাজ তো বিতর্কিতই মনে হয়। তারা নিরপেক্ষ ছিলেন না। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এখন তৎপর হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কমিশনে পরিবর্তন আসা দরকার। নতুন কমিশনে নিরপেক্ষ লোক আসুক, যারা দেশের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তো দেখিনি গত সরকারের আমলে। এখন তাদের যদি সহায়তা দরকার হয়, সরকার সহায়তা করুক। আর যদি তারা সঠিক না হন, তাহলে দুদক পুনর্গঠন করা হোক, যেন কোনোভাবেই লুটপাটকারীরা ছাড় না পায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এটা অন্যতম একটা দাবি ছিল।’

দুদক কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত। দুদক আইন ২০০৪-এর ৭ ধারা অনুযায়ী গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন। 

প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে একজন ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে একজনসহ মোট দুজন বিচারপতিকে বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও অবসরে যাওয়া সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাছাই কমিটির সদস্য হবেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাওয়া না গেলে অথবা তিনি বাছাই কমিটির সদস্যপদ গ্রহণে অসম্মত হলে তার আগে অবসরে যাওয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব সদস্য হবেন। যদি তাকেও পাওয়া না যায় অথবা তিনি বাছাই কমিটির সদস্য হতে অসম্মত হন, তাহলে বর্তমানে কর্মরত মন্ত্রিপরিষদ সচিব সদস্য হবেন।

বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক। ন্যূনতম চারজন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হবে। বাছাই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশন গঠনের জন্য বাছাই কমিটি ছয়জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি তিনজন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। তাদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার পদে নিয়োগ পাবেন।

রাষ্ট্রপতি তিনজন কমিশনার থেকে একজনকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেন। চেয়ারম্যান কমিশনের সব সভার সভাপতিত্ব করেন এবং তার অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কোনো কমিশনার সভায় সভাপতিত্ব করেন। চেয়ারম্যানসহ দুজন কমিশনারের উপস্থিতিতে সভার কোরাম গঠিত হয়। 

দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার যথাক্রমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন