পুলিশের সঙ্গে বিআরটিএর সমন্বয়হীনতা

বন্ধ রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না বিআরটিএ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সারা দেশের সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যানসংবলিত একটি দৈনিক প্রতিবেদন গত বছরের জুন থেকে নিয়মিতভাবেই প্রকাশ করে আসছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গত ২ আগস্টের পর থেকে সংস্থাটি সে প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ রেখেছে। 

বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মূলত দুর্ঘটনার প্রতিবেদনগুলো তৈরি হয়। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরির কাজে বিআরটিএ সমন্বয় করতে পারছে না। এ কারণে দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়মিতভাবে দুর্ঘটনা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে আসছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতো একাধিক বেসরকারি সংগঠন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনা করেই মূলত দুর্ঘটনার প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হয়। যদিও সংগঠনগুলো দুর্ঘটনা ও হতাহতের যে তথ্য প্রকাশ করে, সে পরিসংখ্যানও ভিন্ন হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ৯০২। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে একই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। বাংলাদেশ পুলিশের হিসাবে ওই বছর ৪ হাজার ৪৪৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যানে এ গরমিল নিরসন এবং দুর্ঘটনার ‘‌সঠিক তথ্য’ প্রকাশের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নিয়মিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি থেকেই বিভাগীয় অফিসগুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বিআরটিএ। গত বছরের মে পর্যন্ত সংস্থাটি প্রকাশ করে মাসভিত্তিক দুর্ঘটনার তথ্য। তবে ওই বছরের জুন থেকে মাসভিত্তিকের পাশাপাশি দৈনিক প্রতিবেদনও বিআরটিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ শুরু হয়। তবে ২ আগস্টের পর থেকে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। 

দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশের জন্য বিআরটিএর ওয়েবসাইটে পৃথক একটি ‘মেনু’ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে সর্বশেষ ২ আগস্ট পর্যন্ত দুর্ঘটনার দৈনিক প্রতিবেদন রয়েছে। তার আগে অবশ্য ১৮ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে কারফিউ ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ সম্ভব হয়নি।

দুর্ঘটনার দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ হওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌‌আগে দুর্ঘটনার তথ্য দৈনিক প্রকাশ করা হতো। পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজটি করতাম। আমরা এখন মাসভিত্তিক প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবার দৈনিকভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের কাজ শুরু করব।’ 

বিআরটিএ সর্বশেষ জুলাইয়ের মাসভিত্তিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই মাসে সারা দেশে ৩৮৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ৩৫৩ ও আহত হয়েছে ৩৬৪ জন। জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ৮৪টি দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে ৮২ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়। 

দেশে একই সময় যদিও ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ৪৮৭ জন নিহত ও ৬৭৯ জন আহত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। অন্যদিকে ৩৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭২ জন নিহত ও ৫৪৩ জন আহতের তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন