সিনেমার কাজ শুরু করেছেন অনুদানপ্রাপ্ত নির্মাতারা

মাহমুদুর রহমান

সঞ্জয় সমাদ্দার, মিশুক মনি, মনোজ প্রামাণিক

বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও গুণগত মানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি করতে ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান চালু হয়। প্রতি বছর চলচ্চিত্রের উন্নয়নকল্পে এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। এর অংশ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ অনুদানের আওতায় চারটি শাখায় মোট ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ছয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় দুটি, শিশুতোষ শাখায় দুটি ও সাধারণ শাখায় ১৬টি সিনেমাকে অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে অনুদান দেয়া হয়েছে ছয়টি চলচ্চিত্রকে। ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে ১৬টি সিনেমার প্রতিটি অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা করে, আর বাকি চারটিকে দেয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা করে। এ চারটির মধ্যে দুটি শিশুতোষ ও দুটি প্রামাণ্যচিত্র শাখা।

কেমন চলছে সিনেমার কাজ এবং অনুদান কতটা সাহায্য করছে তা নিয়ে বণিক বার্তার কথা হয়েছে মনোজ প্রামাণিক, সঞ্জয় সমাদ্দার ও মিশুক মনির সঙ্গে। মনোজ প্রামাণিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রথম কথা আমি এ সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক না। আমি যে সিনেমাটি প্রযোজনা করছি এটা সত্যেন সেনের গল্প। সত্যেন সেন ইংরেজ আমলের একজন বিপ্লবী ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন, তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার একটি গল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি। সিনেমার গল্পটা দেশভাগের সময়কার একজন পকেটমার এবং রেলস্টেশনের কাহিনীকে কেন্দ্র করে।’

অনুদান নিয়ে জনমানসে নানা ধারণা আছে। কীভাবে অনুদান দেয়া হয়, এতে যে অর্থ দেয়া হয় তাতে আদৌ সিনেমা নির্মাণের খরচ ওঠে কিনা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে মনোজ বলেন, ‘কোনো কোনো সিনেমার জন্য অনুদানের পরিমাণ যথেষ্ট হতে পারে। তবে আমার ধারণা বেশির ভাগ সিনেমার জন্য এটা যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে আরো সহপ্রযোজক ফান্ড ও স্পন্সর প্রয়োজন হতে পারে।’

একই প্রসঙ্গে পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার বলেন, ‘ব্যাপারটা হলো অনুদান একজন প্রযোজককে দেয়া হয় সিনেমা নির্মাণে সহায়তার জন্য। এ টাকায়ই সিনেমা বানাতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটা একটা সাপোর্ট হিসেবে সরকার দেয়।’

একই কথা জানিয়েছেন নির্মাতা মিশুক মনি। দেয়ালের দেশখ্যাত তরুণ এ পরিচালক বলেন, ‘অনুদানের বিষয়টা হলো সরকার একটা অংশ প্রদান করছেন। এতে সিনেমার পুরো খরচ না-ও আসতে পারে। সেজন্য বাকিটা নির্বাহ করার মতো নিজের সংস্থান থাকা বা অন্য কোনো প্রযোজক যুক্ত করার মতো পরিকল্পনা থাকা ভালো।’

সঞ্জয় সমাদ্দার ও মিশুক মনি উভয়েই তাদের নতুন সিনেমার কাজ শুরু করেছেন। সঞ্জয় সমাদ্দার জানান, তার সিনেমাটি হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে হচ্ছে। এখন প্রি-প্রডাকশন ও কাস্টিংয়ের কাজ করছেন তিনি। এদিকে মিশুক মনি জানান, তিনিও চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছেন এবং কিছুদিনের মধ্যে কাস্টিং ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

প্রতি বছরই বাংলাদেশ সরকার নির্মাতাদের অনুদান দিয়ে থাকেন এবং অনেকেই অনুদানের জন্য আবেদন করেন। অনুদানের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করা উচিত এমন প্রশ্নের উত্তরে মনোজ প্রামাণিক বলেন, ‘আবেদনের ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা সার্কুলার দেয়া হয়। আবেদনকারীকে একটা চলচ্চিত্র প্রকল্প তৈরি করতে হয়। সেখানে বিস্তারিত নিয়মাবলি দেয়া আছে কীভাবে আবেদন করতে এবং জমা দিতে হবে। সে নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পটা জমা দিতে হয়।’ এরপর অনুদানের জন্য যে কমিটি থাকে তারা যাচাই-বাছাই করে মনোনীত করেন। মনোজ বলেন, ‘কমিটির মাধ্যমেই বাছাই করা হয় এবং সব দিকে বিবেচনা করে উপযুক্ত মনে হলে তাকে অনুদান দেয়া হয়।’

উপযুক্ত হওয়ার জন্য কেমন যোগ্যতা থাকা উচিত বা একজন তরুণ নির্মাতা নিজেকে কীভাবে তৈরি করা উচিত এমন প্রশ্নের উত্তরে মিশুক মনি বলেন, ‘আমার মনে হয় অনুদান বা যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে সৎ হওয়া প্রয়োজন। আর প্রতি বছর এত নির্মাতা, প্রযোজক আবেদন করছেন, সেখানে নিজেকে প্রমাণ করার একটা ব্যাপার থাকে। তো কিছুটা ভিন্ন ধারার গল্প, প্রজেক্টটা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সততা ও যত্ন থাকা দরকার।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন