ঠাকুরগাঁওয়ে বিশেষ ক্লাসের নামে বিদ্যালয় কক্ষেই কোচিং

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত শনিবার বিশেষ ক্লাসে শিক্ষার্থী ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ক্লাসের নামে কোচিংয়ে বাধ্য না করতে নির্দেশনা রয়েছে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে মাউশির সে নির্দেশনা মানছেন না শিক্ষকরা। বিশেষ ক্লাসের নামে বিদ্যালয়ের কক্ষেই করাচ্ছেন কোচিং। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যদিও অভিযানের পর কয়েকটি বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। 

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকের হাতে থাকা নতুন শিক্ষাক্রমে বিহেভিয়ার ইন্ডিকেটর (বিআই) মার্কের ভয় দেখিয়ে কোচিং করাতে বাধ্য করাচ্ছেন। এ নম্বরকে পুঁজি করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

সরজমিনে গত শনিবার পৌর শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে। প্রতিটি শ্রেণীতে রয়েছে ৩০-৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে ৪ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ ক্লাসের নামে কোচিং করাতে বাধ্য করালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে বিশেষ ক্লাসে ভর্তি করাতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা ক্লাস করে না তাদের অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়নের ভয় দেখানো হয়। শিক্ষকরা বলেন, চোখ নষ্ট হলে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে, আলাদা এমবিবিএস দেখিয়ে লাভ নেই। আমার বিষয়ে আমার কাছেই পড়তে হবে, অন্য কোথাও পড়ে লাভ নেই।’

অভিভাবক সালেহীন সাকলীন বলেন, ‘যারা বিশেষ ক্লাস করে না তাদের ভীতির মধ্যে রাখা হয়। সরকার যেখানে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তৎপর, সেখানে শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়ালে তা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যারা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে ২৯ জুন থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪ দিন দেশের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। 

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিং বা প্রাইভেটের কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টার খুলে বসেন, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন