বন্যায় নষ্ট হয়েছে চারা ও বীজতলা

সিলেট বিভাগে কমবে আউশ ধানের উৎপাদন

নূর আহমদ, সিলেট ও আফরোজ আহমদ, মৌলভীবাজার

আউশ আবাদের সময় শেষ। যেসব জমির ধান নষ্ট হয়েছে, চলতি মৌসুমে সেখানে আর আবাদ করা যাবে না ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৫ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমির আউশ ধান ও বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে, যার প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন অনেকটাই কম হবে বলে মনে করেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।

কৃষকরা বলছেন, আউশ আবাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। যেসব জমির ধান নষ্ট হয়েছে, চলতি মৌসুমে সে জমিগুলোয় আর আউশ আবাদ করা যাবে না। হালি চারাও অবশিষ্ট নেই। এখন আমন চাষের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমনের বীজতলা তৈরির কাজও শুরু করেছেন অনেকে। ধান নষ্ট হওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পোষাতে সময় লাগবে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িঢহর গ্রামের কৃষক আরব আলী জানান, এবার ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৬০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছিলেন। ধান রোপণের পর বন্যার পানি এসে সব নষ্ট করে দিয়েছে। আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে বন্যায় ১৫ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। অর্থের হিসাবে ১৮৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিভাগের কেবল দুটি জেলায় আউশের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে বীজতলা নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৯৩ হেক্টর। তবে মৌলভীবাজারে নষ্ট হয়েছে ৩০ হেক্টর জমির বীজতলা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান জানান, বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ চলমান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেটে ৯ হাজার ৫৭ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। আর্থিক হিসাবে ক্ষতি হয়েছে ১০২ কোটি ৭০ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা। মৌলভীবাজারে নষ্ট হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির আউশ ধান। হবিগঞ্জে আউশের খেত নষ্ট হয়েছে ৪৬৩ হেক্টর। এছাড়া সুনামগঞ্জে নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ১৩ হেক্টর জমির আউশ ধান।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে আউশের বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধান আবাদ করা হয়। এর মধ্যে বন্যার পানিতে ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আমন ধানচাষীদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, সামনে আরো দেয়া হবে।’

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সুনামগঞ্জে চার হাজার চাষীর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ৫ হাজার ১৬২ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ৬১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৫২, রাজনগরে ১১৫, জুড়ি উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০, কমলগঞ্জে ৯৫ ও বড়লেখায় ৪০০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকরা জানান, ধান নষ্ট হওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পোষাতে সময় লাগবে। বিশেষ করে দরিদ্র চাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ। যেসব জমি নষ্ট হয়েছে সেখানে চলতি মৌসুমে আর আউশ আবাদ করা যাবে না। এখন তারা আমন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেয়েছি, সেটি শুধু সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তাছাড়া হাওরাঞ্চলের অনেক জায়গায় এখনো বন্যার পানি নামেনি। পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সময় লাগবে।’

এছাড়া হবিগঞ্জে ৪৬৩ দশমিক ২ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে বন্যায়। এতে ৩ হাজার ৪৬৩ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কৃষি খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে তাদের দেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন