যতদিন বাঁচি আমার ধারায় নাটক নির্মাণ করে যাব

ছবি: সালাহউদ্দিন লাভলুর ফেসবুক

সফল অভিনেতা থেকে সফল নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু। ‘ব্যস্ত ডাক্তার’, ‘গরুচোর’, ‘হাড়কিপটে’ ছাড়াও অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। পরিচালনা করেছেন দর্শকপ্রিয় অনেক নাটক। এখনো পরিচালনা ও অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত আছেন গুণী এ অভিনেতা ও নির্মাতা। সমসাময়িক কাজ ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহিদ রহমান

এবারের কোরবানির ঈদ কেমন কাটালেন?

প্রত্যেকবার যেভাবে কাটে, এবারের ঈদটাও সেভাবেই কাটিয়েছি। ঈদের দুদিন আগে থেকে ঈদের পর চার-পাঁচদিন বাসায় ছিলাম। কিছু আত্মীয় ছিল, তাদের আপ্যায়ন করেছি। আমি এমনিতেই বাইরে খুব বেশি যাই না।

বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?

আগামী ১৫ জুলাই থেকে একটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ শুরু করব। ধারাবাহিকটির নামফুলকুমার

ইদানীং আপনাকে পরিচালনায় কিংবা অভিনয়ে খুব বেশি একটা দেখা যায় না, কারণ কী?

আসলে কাজ আমি কমিয়ে দিইনি। আমি তো ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কোনো নাটক নিই না, মূলত টেলিভিশনের জন্যই কাজ করি। টেলিভিশনগুলো এখন নতুন নির্মাতাদের নিয়ে কাজ করে। ভিউ ভাইরাল আর্টিস্টরা অগ্রাধিকার পায়। আমি যেহেতু বেশ সিনিয়র হয়ে গেছি এবং আমি যে বাজেট চাই, আমার নাটকের স্টোরি সব মিলিয়ে আমার কাজে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হয়তো কমফোর্ট ফিল করে না। আমি তো কোনো চ্যানেলে গিয়ে বলতে পারি না, আমাকে কাজ দেন। মূলত কারণেই এখন নিয়মিত কাজ করা হয় না। এছাড়া আর অন্য কোনো কারণ নেই।

এবারের ঈদে আপনার নির্মিতপোকা দিয়ে পোকা ধরা নাটকের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

আসলে নাটকটা কেমন চলছে খোঁজ নিইনি। জানি না, দর্শকরা এটাকে কীভাবে গ্রহণ করেছে। নাটকটিতে চঞ্চল চৌধুরীসহ আরো ভালো অভিনয়শিল্পীরা কাজ করেছেন। দর্শকের কেমন সাড়া পাচ্ছি, বিষয়গুলো গত পাঁচ থেকে দশ বছর শুনতে বা জানতে ইচ্ছে করে না। আগে যেমন একটা উন্মাদনা কাজ করত, অনেকের কাছে শুনতাম জানতাম, এখন আর এমনটা কাজ করে না। বিশেষ করে এবারের ঈদেতুফান মুক্তি পাওয়ায় সবাই তুফান ঝড়েই আক্রান্ত ছিল। তাই এবারের ঈদের নাটক কোনটা কেমন গেল, তা আর খোঁজ নেয়া হয়নি।

চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আপনার রসায়ন অনেক পুরনো। তাকে নিয়ে এবারের ঈদে সর্বশেষ একটি নাটকে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে কাজ করার আরো নতুন কিছু অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করতেন।

চঞ্চল যথেষ্ট আন্তরিক একজন মানুষ। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সবসময় নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে। সময় কাজের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তবে ইদানীং টেলিভিশন নাটক নিয়ে ওর আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে। আন্তর্জাতিক মানের কাজ সে করছে। চঞ্চল এরই মধ্যে নিজেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সে এখনো টেলিভিশন নাটক করছে, সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ সে বর্তমানে দেশ-বিদেশে কাজ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। চঞ্চল যে কাজই করে না কেন খুব সিনসিয়ার নিজের সেরাটা দিয়ে করার চেষ্টা করে।

শাকিব খানের তুফানে আপনার অংশগ্রহণ কীভাবে হয়েছে?

রায়হান রাফী একদিন আমাকে বলেছিল, বাংলা নাটকে আপনার অনেক অবদান আছে। আপনার নাটক অনেক দেখেছি টিভিতে। আপনাকে নিয়ে আমি একটা কাজ করব। তুফান করার আগে রাফী আমাকে বলল, আপনার একটা ক্যারেক্টার আছে। আমি কলকাতায় চিকিৎসা নিতে গেলে যখন শুনতে পাই তুফানের শুটিং চলছে, তখন আমি কলকাতা থাকায় ওই সুবাদে সিনেমাটিতে কাজ করা হয়।

তুফান সিনেমায় আপনিসহ আরো কিছু বর্ষীয়ান গুণী শিল্পীদের দেখা যায়। বর্তমান সিনেমায় সিনিয়রদের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার কী মতামত?

টেলিভিশনের গুণী শিল্পী গাজী রাকায়াত, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, চঞ্চল চৌধুরীসহ আমাকে যুক্ত করেছে এটা নিশ্চয়ই চলচ্চিত্রের জন্য খুবই ভালো দিক। একটা কমার্শিয়াল সিনেমায় সিনিয়র অভিনেতাদের যুক্ত করেছে, এটা নিশ্চয়ই রাফীর ক্রেডিট। একজন অভিনেতার চূড়ান্ত টার্গেট থাকে বড় পর্দায় কাজ করার। আর সেটা যদি বাণিজ্যিক সিনেমা হয়, তাহলে সেখানে সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের অংশগ্রহণ আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার জন্য ভালো আলামত।

বাংলা সিনেমার অতীতের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য করলে এখন বাংলা সিনেমা কতটা উন্নতি করতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?

আমি অবশ্যই বলব, অতীতেই বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ ছিল। ওই সময়ে সিনেমা নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী সিনেমা কলাকৌশলীরা অসম্ভব ভালো সিনেমা নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের মানুষের মনে ওই সমস্ত সিনেমা এখনো রেখাপাত করে। মাঝখানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেকটা ভাটা পড়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণের চেষ্টা করলেও এখনো অনেক সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে বাংলা সিনেমা। বর্তমানে একটা সিনেমা তৈরি করলে ওই সিনেমার খরচটুকু তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। কেবল ঈদকে কেন্দ্র করেই সিনেমা মুক্তি দিতে মুখিয়ে থাকে প্রযোজক পরিচালকরা। ভালো একটা সিনেমা মুক্তি পেলে অন্য সিনেমাগুলো হল পায় না। হল না পেলে সিনেমা ব্যবসা করবে কীভাবে। বাংলাদেশে অন্তত ৮০০-১০০০ সিনেমা হল থাকা উচিত।

নাটক নিয়ে আপনার আগামী দিনের ভাবনা কী?

এখন বেশির ভাগ নাটকই ইউটিউবনির্ভর হয়ে পড়েছে। টিভি নাটকের জৌলুস এখন আগের মতো আর নেই। আমি যে ধারার নাটক করি, টেলিভিশন এখন ওই ধারার নাটক থেকে বের হয়ে আসছে। তাদের কনটেন্ট এখন পরিবর্তন হচ্ছে। বিশাল একটা জনগোষ্ঠী আমার নাটক পছন্দ করে। যারা আমার নাটক পছন্দ করে, তাদের জন্য আমি যতদিন বাঁচি আমার ধারায় অভিনয় নাটক নির্মাণ করে যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন