চলচ্চিত্রে মিয়াজাকির কোনো উত্তরাধিকারী নেই...

ফিচার ডেস্ক

ছবি: ব্রিটানিকা

অস্কারের এবারের আসরটি ছিল ওপেনহাইমারের। ঝুলিতে সাত ক্যাটাগরির পুরস্কার তোলা চলচ্চিত্রটি নিয়েই এখন চারদিকে মগ্ন। তবে আসরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কিংবদন্তি জাপানি ‘অ্যানিমে’ নির্মাতা হায়ায়ো মিয়াজাকি। সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার বিভাগে এবারের আসরে পুরস্কৃত হয়েছে তার ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’। লস এঞ্জেলেসে পুরস্কার ঘোষণার পরই গুঞ্জন ওঠেছে, ৮৩ বছর বয়স্ক নির্মাতা কি এবার থামবেন?

যুদ্ধ নিয়ে মিয়াজাকির একান্ত ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি উঠে এসেছে ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ সিনেমায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি সবচেয়ে প্রবীণ হিসেবে ফিচার ফিল্ম বিভাগে নিলেন সম্মাননা। এর আগে তিনি ‘স্পিরিটেড আওয়ে’ সিনেমার জন্য ২০০৩ সালে পুরস্কৃত হন। তবে অনুষ্ঠানে মিয়াজাকি কিংবা স্টুডিও গিবলির প্রযোজক তোশিও সুজুকির কেউ-ই উপস্থিত ছিলেন না।

আশির দশকে মিয়াজাকি তার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন স্টুডিও গিবলিতে। তারপর কেবল জাপানে নয়, সারা পৃথিবীতেই মিয়াজাকি অনন্য নাম। জাপানে ১৬-৬৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষই তার কোনো না কোনো সিনেমা দেখেছেন। এর আগে তিনি অন্তত তিনবার অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন চলচ্চিত্র থেকে। কিন্তু তার পরও প্রতিবারই তিনি ফিরে এসেছেন। বয়স ও অনুপস্থিতি বিবেচনায় এবারের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো না। যদিও অনেকেই ধারণা করছেন, তিনি নতুন করে কাজে ফিরবেন। টাফটস ইউনিভার্সিটিতে জাপানিজ স্টাডিজের অধ্যাপক সুসান নেপিয়ার বলেন, ‘আমার ধারণা যতক্ষণ তিনি পেনসিল ধরতে পারবেন, ততক্ষণ তিনি অবসর নেবেন না। তিনি অবসরের জন্য জন্মাননি। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই তার কাজ।’ 

যেটাই হোক, মিয়াজাকির পর তার উত্তরাধিকার টেনে নেয়ার মতো তেমন কেউ নেই। তিনি ছিলেন একরকম অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় সংস্কৃতি ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে। আগামী দিনগুলোয় জাপানের নিজস্ব সংস্কৃতি কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। সুসান বলেন, ‘মিয়াজাকি জাপানের জাতীয় সম্পদ, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পদও। তিনি এমন এক নির্মাতা, যার অনুপস্থিতি কোনোভাবেই ‍পূরণীয় নয়।’ 

দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন সিনেমায় মিয়াজাকি দেখিয়েছেন মাহিতো মাকি নামের এক ১২ বছর বয়সী বালককে, যার মা ১৯৪৫ সালে টোকিওর বোমাবর্ষণে মারা যান। সে সময় প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। যুদ্ধ নিয়ে মিয়াজাকি সরব প্রথম দিক থেকেই। যদিও সবসময় সমর্থন পেয়েছেন, তা নয়। ২০১৩ সালে তার নির্মিত সিনেমাকে জাপানবিরোধী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। লেখক ও গবেষক রোনাল্ড কেল্টস বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে মিয়াজাকি জাপানি অ্যানিমের অবিসংবাদিত মুখপাত্র। অনেক মানুষ অ্যানিমে ছাড়া জাপানের আর কিছু নিয়ে আগ্রহী নয়। এক্ষেত্রে প্রশংসা ও বক্স অফিস তার জন্য অনেক বড় কিছু। মিয়াজাকি ও স্টুডিও গিবলি উভয়েই জাপানের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে সাহায্য করেছে বহির্বিশ্বে।’

মিয়াজাকির অবদান ও প্রভাবের কারণেই অধিকাংশ বোদ্ধাই মনে করেন, ভবিষ্যতের জাপানে হয়তো অনেক শিল্পী আসবে। কিন্তু মিয়াজাকির তুল্য কোনো নির্মাতা আসবে না। তার কোনো উত্তরাধিকারী নেই।

সূত্র: গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন