স্বনির্ভরতার পথে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা

শেখ তৌফিকুর রহমান, লালমনিরহাট থেকে

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

দেশের উত্তরের জনপদ লালমনিরহাট কৃষিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। কৃষিজমিতে কাজ করেন সেখানকার বহু ভূমিহীন কৃষক। তাদের অনেকেরই ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ভূমিহীন ব্যক্তি পেয়েছেন নিজস্ব ঠিকানা। সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া জমিসহ বাড়ির আঙিনাকে কাজে লাগিয়ে পরনির্ভরশীলতা থেকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন উপকারভোগীরা। আধাপাকা বাড়িতে কেউ হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করছেন। কেউ গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান, কেউ কেউ দিয়েছেন ছোট দোকান, অনেকেই করছেন কৃষিকাজ।

সরকারি খাসজমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতেন আমিন হোসেন এবং বুলবুলি বেগম দম্পতি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ একটি আধাপাকা বাড়ির মালিক এ দম্পতি। আমিন হোসেন পেশায় কৃষক, আর বুলবুলি গৃহিণী। সংসারে বাড়তি উপার্জনের জন্যই উঠানে চাষ করছেন সবজি। একই সঙ্গে সেলাইয়ের কাজেও নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন বুলবুলি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে উঠানেই রোপণ করেছেন আঙুর, কাঁঠাল ও আমের মতো ফলদ গাছ।

নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আমিন হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি অন্যের জমিতে বর্গাচাষী হিসেবে কাজ করি। নিজের কোনো জমিজমা না থাকায় দীর্ঘদিন সরকারের খাসজমিতে একটা ঘর করে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে বসবাস করতাম। পরে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমিসহ ঘর দিয়েছেন। অধিক উপার্জনের লক্ষ্যে এখন আমি অন্যের জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায়ও সবজি চাষ করছি।’

বুলবুলি বেগম বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সেলাইয়ের কাজ করছি। একটি আঙুর ফলের চারা পরিচর্যা করে বড় করেছি। গাছে ফলও ধরেছে। নিজেদের খাওয়ার জন্য আম ও কাঁঠাল গাছও লাগিয়েছি। আগে তিনবেলা খাবারের চিন্তা ছিল, এখন অর্থ সঞ্চয় করার চেষ্টা করছি।’

লালমনিরহাটের চার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর হবে ১ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৫টি, পাটগ্রামে ৯৯টি, হাতিবান্ধায় ১৬৬টি ও আদতমারীতে ১৪২টি। আগামীকাল বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। লালমনিরহাটের সঙ্গে আরো উদ্বোধন হবে ভোলা ও কক্সবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের জায়গায় নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। প্রার্থনা ঘর এবং কবরস্থান, পুকুর এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা দিয়ে আবাসন প্রকল্পগুলোকে সহজতর করা হয়েছে। 

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালীর (বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার অংশ) রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর উদ্বোধন করবেন। এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমি ও গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছে ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন মানুষ। এ পর্যায়ে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ৭০টি উপজেলা। এ হিসাবে পূর্বঘোষিত জেলা-উপজেলাসহ ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, ‘কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি এবং গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু ঘর উপহার দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকা হয়নি বরং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে। তাদের দুই শতাংশ জমি দলিলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে সবজি চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন