সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বাড়ছে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

অশোক ব্যানার্জী, সিরাজগঞ্জ

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। গত পাঁচদিনে পানি বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতীরবর্তী অঞ্চল শাহজাদপুরে শুরু হয়েছে ভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পানি বাড়ার এ ধারা অব্যাহত থাকলে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা তাদের। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তবে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, শাহজাদপুরের জালালপুর ও কৈজুরী গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলা ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছে। অসংখ্য স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। ফলে আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে এসব অঞ্চল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী গ্রামের আব্দুর রহমান, এরশাদ আলীসহ আরো কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে শাহজাদপুরের জালালপুর ও কৈজুরী গ্রামে নদীভাঙনে শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অসংখ্য স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে সরকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে বলে শুনছেন তারা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারো ভাঙনের কবলে পড়তে হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষকে। কয়েকদিনের ব্যবধানে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে আরো শত শত ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা নদীতে ভেঙে যাবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন থেকে যমুনার পানি বাড়ছে। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে তা বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সোমবার ৩০, মঙ্গলবার ৩৭, বুধবার ৫০ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এছাড়া কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে গতকাল পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে সোমবার ৩১, মঙ্গলবার ৪৪, বুধবার ৪৪ ও বৃহস্পতিবার ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যমুনায় বাড়তে থাকায় আমরা বাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় সবসময় তদারকি করছি। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগসহ জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষায় শাহজাদপুর উপজেলায় ডানতীর সংরক্ষণে প্রায় সাত কিলোমিটারজুড়ে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণকাজ চলমান। সিসি ব্লক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাজ প্রক্রিয়াধীন। মানুফ্যাকচারিং শেষ হলে স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। তখন ওই অঞ্চলে ভাঙন আর থাকবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন