সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ৩৭% পদেই লোকবল সংকট

নূর আহমদ, সিলেট

ছবি : বণিক বার্তা

এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। বিভাগের এক কোটিরও বেশি মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থলও এটি। তবে প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে ৯০০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদ রয়েছে ২ হাজার ৩৫৭টি, যার ৩৭ শতাংশই শূন্য।

হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আড়াই-তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। সে হিসেবে ৯০০ শয্যা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এছাড়া আরো প্রায় তিন হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। তবে জনবল সংকটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যাসংখ্যা ১ হাজার ৪০০-তে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনুমোদন হলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার রোগী সেবা নেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ রোগী সেবা নেন হাসপাতালের বহির্বিভাগে। আরো আড়াই-তিন হাজার রোগী সেবা নেয় আন্তঃবিভাগে। জ্বর, সর্দি, কাশি, প্রসূতি, ক্যান্সারসহ জটিল রোগের চিকিসা নিতে আসে রোগীরা। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের রোগীরাও উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানে আসে। তবে জনবল সংকটে সেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

রোগীদের অভিযোগ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় মেঝেতে বেড দিয়ে সেবা দেয়া হয়। হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামের অরবিন্দ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনি। মেঝেতে অন্য দুটি শয্যার মাঝখানে কোনো রকমে বসে ছিলেন। অরবিন্দ জানান, সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। তবে টাকা দিলে ওয়ার্ড বয় ম্যানেজ করে দেন। না দিলে খালি হলেও বলবে খালি নেই।

বালাগঞ্জের উমরপুরের বাসিন্দা হাসিনা বেগম বলেন, ‘গরিব মানুষ আমরা। বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। এজন্য ওসমানী মেডিকেলে এসেছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ৫০০ থেকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। জনবল থাকার কথা ২ হাজার ৩৫৭ জন। রয়েছেন ১ হাজার ৪৮২ জন। প্রায় ৮৭৫টি পদ শূন্য। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। সবচেয়ে বেশি সংকট তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে। এ দুটি শ্রেণীতে তিন শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন সূচকে প্রথম হয়ে আসছে হাসপাতালটি। অথচ বর্তমানে হাসপাতালটি পরিচালনার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা একেবারে তলানিতে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালটির সুনাম ধরে রাখা কঠিন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আগে চারটি কোম্পানি জনবল সরবরাহ করত। এখন তিনটি কোম্পানির লোকবল অনুপস্থিত। একটি কোম্পানির সীমিতসংখ্যক লোকবল উপস্থিত রয়েছে। 

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘৯০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা থাকে প্রায় তিন হাজার। তবে হাসপাতালের শয্যা ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০-তে উন্নীত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সেটি বাস্তবায়িত হলে রোগীদের অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা দেয়া যাবে। তবে শুধু শয্যা সংখ্যা বাড়ালে হবে না, পাশাপাশি জনবল নিয়োগ দিতে হবে। যাদের মধ্যে দক্ষ, অদক্ষ সব ধরনের লোকবলই থাকা প্রয়োজন। কেননা, হাসপাতালে লোকবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৫ তলা ভবন রয়েছে। এটিতে ক্যান্সার, কার্ডিওলজি ও নেফ্রোলজি চিকিৎসা হবে। এছাড়া জাইকার অর্থায়নে নির্মীয়মাণ আটতলা ভবনে ল্যাবরেটরি, প্যাথলজিসহ অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। স্বল্পসময়ে এসব কাজ করার জন্য লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য বরাদ্দসহ লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে ভবনই শুধু হবে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে রোগীর চাপ যেন বাড়ছে। চাপ সামাল দিতে হাসপাতালটি দুই হাজার শয্যায় উন্নীত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জনবল বাড়ানো দরকার। কী কারণে ১ হাজার ৪০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া থেমে আছে, সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন