সিপিডির ব্রিফিং

আমদানি শুল্ক কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সুফল মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

আমদানি শুল্ক কমিয়ে পণ্যে দাম কমানোর চেষ্টায় সুফল মিলছে না বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক্ষেত্রে কতিপয় আমদানিকারক শুল্ক কমানোর সুফল নিচ্ছেন বলেও মত তাদের। গতকাল সিপিডি আয়োজিতবাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।

ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সময় তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মিনিকেট চালের দাম ১৭ ভাগ বেড়েছে। একই সময়ে পাইজামের দাম বেড়েছে ১৫ ভাগ এবং মোটা চালের ৩০ ভাগ। অর্থাৎ মুনাফাখোররা বেশি লাভ করছে। এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা গেছে। আমদানি শুল্ক কমিয়েও পণ্যের দাম কমানোর চেষ্টায় সুফল মিলছে না। শুল্ক কমানোর সুফল কিছু আমদানিকারক ব্যবসায়ী নিয়ে যাচ্ছেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর মর্জির ওপর বাজার চলতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা। ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক। আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব সাধারণ মানুষ। ফলে ধনী গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে। এক কেজি চিনির দাম এখন ১৩০ টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এক কেজি চিনির দাম বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৯ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ টাকা। এছাড়া গত সাড়ে পাঁচ বছরে গরুর মাংসের দাম ৫৮ শতাংশ ব্রয়লার মুরগির দাম ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে ১৭টি দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি এবং খাবারের পেছনে মাথাপিছু খরচের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ওইসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম, যা হাজার ৮০৫ ডলার। এটি ২০২২ সালে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে ডলারের হিসাবে। অথচ ওই ১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ ৯২৪ ডলার। তালিকায় অন্য ১৬টি দেশ হলো ইরান, ভারত, লাওস, শ্রীলংকা, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া, বলিভিয়া, মরক্কো, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, জর্ডান দক্ষিণ আফ্রিকা।

মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার দিকে নজর দিতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশের অর্থনীতি ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও অর্থবছরের বাকি মাসগুলোয়ও একই পরিস্থিতি থেকে যাবে। কারণ যেকোনো নীতির ফল পেতে একটু সময় লাগে। তবে যেকোনো নীতির কার্যকারিতা অন্যান্য ক্ষেত্রে সহায়ক নীতিমালার ওপরও নির্ভর করে।

তিনি আরো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিতে আমরা ১০ শতাংশে অবস্থান করছি, যা বর্তমানে শ্রীলংকার চেয়েও বেশি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হয়েও বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা আয় করি কম। কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়, যার ভুক্তভোগী গরিব সাধারণ মানুষ। আমরা কোন অর্থনীতির দেশে রয়েছি? সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। সরকার অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ট্যারিফ কমিয়ে দেয়। তার সুফল তোলেন এক ধরনের ব্যবসায়ীরা।

ধনী গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ আয় ২৬৭৫ মার্কিন ডলার, আর মাথাপিছু জাতীয় আয় ২৭৮৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয় যতটুকু পেয়েছি, মূলত উচ্চ আয় করেন তাদের কারণে। গরিব মানুষদের কথা বিবেচনা করলে তাদের আয় কমে গেছে। এখানে বৈষম্য বেড়েছে। তাদের উন্নতি হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের নেয়া অতিরিক্ত ঋণ একটি বড় কারণ। বিষয়টি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের যে সাড়ে শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জিত হবে না বলে মনে করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন