সাতক্ষীরায় তিন নদীতে ভাঙন, ১০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

গোলাম সরোয়ার I সাতক্ষীরা

ভাঙনের কবলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরায় কপোতাক্ষ নদ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি কপোতাক্ষ, ইছামতী ও খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনে ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব বেড়িবাঁধ আগামী বর্ষার আগে সংস্কার করা না হলে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে থাকবে।

কপোতাক্ষ শ্যামনগর উপজেলায়, ইছামতী কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় এবং খোলপেটুয়া নদী আশাশুনি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সম্প্রতি বৃষ্টি ও অতিরিক্ত উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলার আইলাদুর্গত গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে সোরা গ্রামের গাজিবাড়ি, বৈদ্যবাড়ি, মালিবাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে ভারী কোনো জোয়ার এলে বাঁধ ভেঙে আশপাশের বহু গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাবনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়ার ভাঙনে তার ইউনিয়নের সুভদ্রকাটি, চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, হরিশখালী ও প্রতাবনগর পয়েন্টে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে এসব ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করতে না পারলে নদী-তীরবর্তী মানুষজন ঝুঁকিতে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ। প্রতি বছর খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভাঙনে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলহানির পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়। কার্যত কোনো লাভ হয় না।’

বেড়িবাঁধ ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুভদ্রকাটি গ্রামের আব্দুল খালেক ও হাজি নুরুল ইসলাম, কুড়িকাউনিয়া গ্রামের আবুবকর ঢালী ও বাবর আলী জানান, ১০-১২ বছর ধরে কপোতাক্ষ নদের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর তাদের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভাঙন তীব্র হওয়ায় তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে রক্ষা করতে হলে জরুরিভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তারা।

সাতক্ষীরা জেলা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী জানান, ১৯৬০ সালের দিকে মূলত উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের বহু নদী-খাল মরে যায়। শুধু তা-ই না, এসব নদীর বাঁধ ভেঙে প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল যেমন নষ্ট হয়, তেমনি বহু মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে গৃহহীন হয়ে যায়।

আশেক ইলাহী বলেন, ‘প্রতি বছর পাউবো এসব বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

পাউবো সাতক্ষীরা ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, আশাশুনি উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অতিঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আশাশুনি উপজেলার শুভ্রকাটি, কালিমাখালী, হরিশখালী, কোলা, কেয়ারগাতি, জালালনগর ও আনুলিয়া পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি মেরামতের জন্য ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ওই বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, ‘‌পাউবো ডিভিশন-২-এর অধীনে মোট ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে পোল্ডার ৭/২, ৭/১ এবং পোল্ডার ৪-এর অধীনে ১৬৩ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ টেকসই সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’

পাউবো ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, ডিভিশন-১-এর অধীনে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার দুর্গাবাটি, কালিগঞ্জের খানজিয়া এবং দেবহাটার ভাতশালা পয়েন্টসহ অন্তত ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বাঁধ সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি টাকার জরুরি বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া গাবুরা এলাকায় সাতক্ষীরা জেলার ১৫ নম্বর পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প চলমান। ১ হাজার ২০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের প্রায় ২২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‌ভৌগোলিক কারণে সাতক্ষীরা অঞ্চলের নদ-নদীর মাটি কম আঠালো। সংস্কার করলে টেকসই হয় না। তবে ব্লক দিতে পারলে বেড়িবাঁধগুলো নিয়ে আর ঝুঁকি থাকবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন