জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর দুবাইয়ের পথে এমভি আবদুল্লাহ

নাবিকদের ফোন পেয়ে উৎকণ্ঠার অবসান স্বজনদের

রাশেদ এইচ চৌধুরী I চট্টগ্রাম ব্যুরো

জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তির পর ইইউ নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা ছবি: সংগৃহীত

সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে ৩২ দিন পর মুক্তি পান বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। মুক্তি পেয়েই দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তারা। তাদের ফোন পেয়েই উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে স্বজনদের।

এদিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর দুবাইয়ের পথে রয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। দুবাইয়ে পণ্য খালাসের পর জাহাজের ২১ নাবিক ওই জাহাজেই দেশে ফিরবেন। বাকি দুজন ফিরবেন উড়োজাহাজে করে।

গত ৩২ দিনের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার মো. তানভীরের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে একেকটা দিন কাটিয়েছি। ভোর ৪টার দিকে ছেলে ফোন করে মুক্তির কথা জানিয়েছে। মুক্তির খবর পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। ঈদের দিন তো আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না। কিন্তু ছেলের মুক্তির ফোন পেয়েই পরিবারে ঈদের আনন্দ ফিরে আসে।’ 

রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ সাজ্জাদ ফোন করেন মা শামসাদ বেগমকে। তিনি বলেন, ‘ছেলের ফোন পেয়ে কতটা আনন্দিত হয়েছি, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছেলে ফোন দিয়ে বলল, মা, দোয়া করো, আমরা মুক্ত হয়েছি। এখন আমাদের পাহারা দিয়ে নৌবাহিনীর লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনটা শান্ত হলো। এবার এলে ঘটা করে ছেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারব।’ 

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া নাবিকদের একজন নুর উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আমিন শরীফের ছেলে। নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার স্বামী যখন টেলিফোনে মুক্ত হওয়ার খবর জানাল, তখনই মনে হলো আজ আমাদের ঘরে ঈদ।’

জাহাজের আরেক নাবিক মো. আসিফুর রহমান রোববার বেলা ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে বলেন, ‘সোমালিয়ার সময় রাত ১২টা ৮ মিনিটে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছি।’ অল্প সময়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্তির জন্য সরকার ও মালিকপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘আজ আমাদের প্রকৃত ঈদ।’

আরেক নাবিক জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগরের দক্ষিণপাড়ায়। তার মা রোজিনা বেগম বলেন, ‘জলদস্যুদের হাতে ছেলের আটকের খবর শোনার পর থেকেই কীভাবে কী চলছিল, জানি না। ছেলের মুক্তির খবরে সব বিষাদ মুছে গেছে।’ 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নাবিক আনোয়ারুল হক রাজুর বাবা আজিজুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছেলের মুক্তির খবরে আমাদের পরিবারে আনন্দ ফিরে এসেছে। জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ 

জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলামের বাড়ি খুলনার সোনাডাঙ্গার করিমনগরে। ছেলের মুক্তির খবরে মা দিল আফরোজ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। অপেক্ষা করছি ছেলেকে কখন বুকে জড়িয়ে ধরব।’

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। এরপর ২০ মার্চ মুক্তিপণের ব্যাপারে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে তারা। 

কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল কত অল্প সময়ের মধ্যে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যায়। কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই তাদের মুক্তি মেলায় আমরা খুবই আনন্দিত।’ তিনি জানান, জাহাজটি এক সপ্তাহের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছার কথা। সেখান থেকে একই জাহাজে করে কিংবা উড়োজাহাজে নাবিকদের চট্টগ্রামে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।

জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার জন্য এসআর শিপিংকে ধন্যবাদ। বন্ধু, পরিবার ও সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীকে ধন্যবাদ, যারা পুরো যাত্রায় প্রার্থনা করেছেন। ইউরোনাভফোর অপারেশন আটলান্টাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ বাংলাদেশকে। তোমাকে ভালোবাসি এবং তোমাকে মিস করছি বাংলাদেশ।’

কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দুজন নাবিক দুবাই থেকে সরাসরি উড়োজাহাজে করে দেশে ফিরবেন। বাকি ২১ জন জাহাজে করে ফেরার ইচ্ছা জানিয়েছেন। নাবিকদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন