চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার মান বজায় রাখা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ

ছবি : বণিক বার্তা

ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ সম্মাননা ডা. আলীম মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু), রয়েল আলেকজান্দ্রা হাসপাতাল, পেইজলি, ইউকে থেকে চক্ষু বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। সম্প্রতি বিএসএমএমইউ ও দেশের স্বাস্থ্য খাতের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য হিসেবে আপনি সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন? 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিরাট স্থাপনা এবং এর প্রতি মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ যেন প্রকৃত সেবা পায়, সন্তুষ্ট হয়, শিক্ষা ও গবেষণার মান বজায় থাকে—এসব নিশ্চিত করা আমার কাছে মনে হয় বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া কোরিয়ান সরকার, এক্সিম ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় নতুন যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে, হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করাও একটি চ্যালেঞ্জ।  

আগে আমাদের দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণী চিকিৎসা গ্রহণে দেশের বাইরে যেতেন। ইদানীং মধ্যবিত্ত শ্রেণীও চিকিৎসা নিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। এতে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। বিএসএমএমইউ এবং তার শীর্ষকর্তা হিসেবে আপনি কী ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?  

আমার মনে হয় এর সঙ্গে এক ধরনের মানসিকতা জড়িত; কিছু লোক ভারতে যাচ্ছে, ভারতের কিছু লোক সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে, সিঙ্গাপুরের লোক যুক্তরাষ্ট্রে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে সবাই বিদেশ যেতে পারে না; তারা এখানেই চিকিৎসা নেয়। করোনাকালীনও সবাই দেশেই চিকিৎসা নিয়েছে। দেশের যারা চাইলেই বিদেশ যেতে পারে তারাও আমার কাছে, এখানেই চিকিৎসা নেয়। সুতরাং এটি মূলত আস্থার ব্যাপার। দেশীয় চিকিৎসা খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। চিকিৎসা খাতের কোন কোন জায়গায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে সে ইস্যুগুলো চিহ্নিত করতে হবে। চিকিৎসকদের দক্ষতা কম, এমনটা আমার মনে হয় না। কেননা অনেক ভালো ভালো চিকিৎসক আমাদের দেশে রয়েছেন। এ আস্থাটা আমাদের আনতে হবে। আমাদের ওপর অনেক চাপও থাকে। কীভাবে অতিরিক্ত চাপ কমানো যায়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কীভাবে রেফারেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে প্রকৃত রোগীরা বড় কনসালট্যান্টের কাছে যেতে পারবে, এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শহরভিত্তিক প্রাইমারি হেলথকেয়ারের অভাব রয়েছে। ফলে যেসব রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করা যেত, যেমন জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা ইত্যাদি। এসব রোগের কারণেও মানুষ বিএসএমএমইউ কিংবা ঢাকা মেডিকেলে যায়। কিন্তু এসব কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলেই হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাইমারি হেলথকেয়ার হিসেবে যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মডেল দিয়েছেন, তা তার চিন্তাপ্রসূত। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রদান করতে পারে। এখানে যাওয়ার পর যদি কোনো উচ্চতর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে কমিউনিটি ক্লিনিক রোগীকে উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেবে অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেবে। অর্থাৎ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক ধরনের শৃঙ্খলা রয়েছে, অবকাঠামোও রয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ঢাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে বড় বড় হাসপাতালের ওপর থেকে রোগীর চাপ কমবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা রোগীদের অনেক সময় দিতে পারবেন এবং চিকিৎসকদের ওপরও এ রোগী দেখার চাপ কমবে বলে আমি মনে করি। 

আমাদের জেলা বা থানা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় অনাস্থার কারণে চিকিৎসা গ্রহণে মানুষ ঢাকামুখী হয়।  ফলে শহরের হাসপাতালগুলোয় বেশ চাপ দেয়া যায়, এতে সঠিক চিকিৎসা অনেক সময় ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় আঞ্চলিক বা প্রান্তিক পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর প্রতি আস্থা ফেরানোর জন্য কী করা যেতে পারে?

এজন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে সর্বজনীন চিকিৎসাসেবার মূল কেন্দ্র করতে হবে। এখানে সব ধরনের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে। আর যে মেডিকেল কলেজগুলো রয়েছে, সেগুলো হবে জাতীয় পর্যায়ের। আমাদের দেশে যারা এফসিপিএস, এমএস প্রমুখ ডাক্তার রয়েছেন তারা অনেক ভালো কাজ করেন। কিন্তু তারা সবাই গিয়ে জড় হন বিভাগীয় শহরগুলোয়। এ ব্যবস্থাকে যেভাবেই হোক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। একজন ডাক্তার উপজেলা হাসপাতাল থেকে ক্রমে জেলা, বিভাগ এবং পরবর্তী সময়ে মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় চলে আসে, এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নির্দিষ্ট সময় কাজ করার জন্য একজন চিকিৎসকের ওপর অবশ্যই বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। স্থানীয় বা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান না করলে তার প্রমোশন হবে না—এমনটা করা যেতে পারে। এজন্য জেলা হাসপাতালগুলোয় ডাক্তারদের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে ডাক্তাররা থাকবে। আমি নিজে যখন এফসিপিএস পাস করি তখন রাজবাড়ী জেলায় দীর্ঘদিন কাজ করেছি। প্রতি সপ্তাহে আমি সেখানে যেতাম। এরপর যখন ঢাকায় এলাম, এখনো রাজবাড়ীর মানুষজন ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমার মনে হয়, উপজেলায় চিকিৎসক ধরে রাখার হার কম। এখন নারী ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়ছে। মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। এরা যখন ডাক্তার হয়ে বের হচ্ছে, এদেরকেও গ্রামে-গঞ্জে যেতে হবে, কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু তারা তখনই সেখানে গিয়ে কাজ করবে, যখন কর্মপরিবেশ নিরাপদ হবে। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ডাক্তার হয়, তাদের একই স্টেশনে দায়িত্ব দিলে তারা সেখানে থাকবে। আবার যাদের সন্তান রয়েছে, তাদের পড়াশোনার জন্য সুব্যবস্থা থাকতে হবে। আমার জানা মতে, এখন উপজেলা পর্যায়ে ভালো স্কুল রয়েছে। তাদের জন্য অবশ্যই এ জায়গাটিও নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো করতে পারলে আমার মনে হয় তাদের ধরে রাখতে পারব। দেশের সব ক্ষেত্রেই নারী জাগরণ ঘটেছে, শুধু স্বাস্থ্য খাত ছাড়া। নারীরা যদি কমিউনিটি ক্লিনিকে যান তাহলে স্বাস্থ্য খাতে নারী চিকিৎসকের সংকট কাটবে।

ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) যেমন একটি আস্থা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়েছে, বিএসএমএমইউকে তেমন পর্যায়ে উন্নীত করতে আপনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

আমি চেষ্টা করব। এরই মধ্যে সরকার এ ব্যাপারে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন, আগামীতেও সাহায্য করবেন বলে আমি আশাবাদী। এছাড়া আমি মন্ত্রণালয় থেকেও সহযোগিতা পাব বলে আশা করি। আমার যারা সহকর্মী, আমরা সবাই মিলে মানুষের সেবা করব। তবুও যারা আমার সহকর্মী, যারা কর্মরত থাকবেন, তাদের যেন কাজ নিয়ে সন্তুষ্টি থাকে, তা নিশ্চিতে আমি সচেষ্ট থাকব। শিক্ষা, গবেষণা ও সেবা—এ তিন ক্ষেত্রেই বিশ্বমানের হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব এবং সবার প্রচেষ্টায় এটিকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব। 

সুচিকিৎসা নিশ্চিতে চিকিৎকদের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। নার্সিং খাতের উন্নয়নে বিএসএমএমইউ কী ভূমিকা রাখতে পারে?  

শুধু বিএসএমএমইউ নয়, সারা বাংলাদেশেই নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আমি মনে করি, তারা যেন স্বাস্থ্য খাতে আরো ভালো করতে পারে এজন্য তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উন্নত দেশে স্বাস্থ্য খাতের মূল চালিকাশক্তি হলো নার্স বা সেবিকারা। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে এ খাত উন্নত হবে বলে আশা রাখি। নার্স সেবাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। নার্সরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। এটি একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমি এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাব। 

দেশে অনেক অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখা যায়। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোর আশপাশেই সেন্টারগুলো বেশি দেখা যায়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়ছে, আবার অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়? 

এক্ষেত্রে আমি মনে করি, বড় হাসপাতালগুলোর চারপাশে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিতে হবে যেন সেই সীমার মধ্যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মেসি গড়ে না ওঠে। সরকার, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে এবং এ নিয়ম সবার জন্য প্রযোজ্য করতে হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। যখনই একটি বড় হাসপাতালের সামনে এ জাতীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হয়, তখন তার উদ্দেশ্য থাকে হাসপাতালটি থেকে সুবিধা গ্রহণ। আমি যখন চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলাম তখন তার সামনে অনেক দোকান গড়ে ওঠে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সেগুলো ভেঙে দিয়েছিলাম। ভেঙে দেয়ার পর দোকান মালিকরা হাইকোর্টে আমার বিরুদ্ধে রিট করেছিল। ফলে আমাকে আদালতে যেতে হয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ওই জায়গা সরকারি, আমি কেন বাধা সৃষ্টি করব! পরবর্তী সময়ে তারা আবার সেখানে ব্যবসা শুরু করে। এরপর আমি যখন মহাপরিচালক হই, তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে কথা বলে পুনরায় সেসব দোকানপাট সরিয়ে ফেলা হয়। এখন সেখানে ফুটপাত হয়েছে, হাসপাতালের ভেতর পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে, পুরো জায়গার সদ্ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ শুধু ভেঙে দিলেই হবে না। দেশের মানুষের সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়, আইন প্রয়োগকারী ও সিটি করপোরেশন—সবার মধ্যে ঐকমত্য থাকতে হবে। এছাড়া ভেঙে ফেলার পর মনিটরিংও করতে হবে, নয়তো সেগুলো আবার গজিয়ে উঠবে। 

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সুপার সব কাজ হওয়া উচিত। উন্নততর সব স্বাস্থ্যসেবা সেখানে থাকা উচিত। সেখানে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হবে বিশ্বমানের। সেখানে মস্তিষ্কের জটিল সব সার্জারি সম্পন্ন হবে। হাসপাতালে উন্নততর প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত থাকবে। রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনসিস প্রক্রিয়া হবে বিশ্বমানের; যাতে সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে গিয়ে তা করতে না হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যেন আর বিদেশমুখো হতে না হয় এবং জটিল হৃদরোগের সার্জারিগুলো এখানে সম্পন্ন করা যায়, সে সক্ষমতা থাকবে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে কীভাবে সে সক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া যায় সে পরিকল্পনা আমার রয়েছে। 

দেশের শীর্ষ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কীভাবে গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে বিএসএমএমইউ?

আমাদের এখানে কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে নানা গবেষণা হচ্ছে। বিএসএমএমইউতে গবেষণা বৃদ্ধির জন্য আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে, একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেখানে দেশী-বিদেশী কনসালট্যান্টরা যাতে যুক্ত হতে পারে সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। গবেষণার খাত চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বিদেশী গবেষকদের নিয়ে এসে ক্ষেত্রগুলো প্রস্তুত করব। গবেষণা তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি তৈরি করে দেব। তাহলেই গবেষণা সঠিক পথে এগোবে বলে আশা রাখি। 

বিএসএমএমইউর বহির্বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। এতে সেবাপ্রত্যাশীদের বড় আকারের জট দেখা যায়। এ চাপ প্রশমনে কী করা যায়?

চাপ প্রশমনের জন্য প্রথমে যা করা যেতে পারে ফ্যাসিলিটিজ কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া। যারা রোগী দেখে সে রকম চিকিৎসক ও কনসালট্যান্টসের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। সব রোগী এক জায়গায় জটলা না করে বিভাগ অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া যায়। রিসিপশন থেকেই জায়গামতো রোগী পাঠিয়ে দিয়ে পেশেন্ট ফ্লো’টা ঠিক রাখতে হবে। বিএসএমএমইউর বহির্বিভাগ আসলেই চমৎকার একটি সেবা বলে জানি। এখানে আমরা যদি রোগীর প্রবাহটি ঠিক করতে পারি তাহলে কিন্তু এ বিভাগ আরো গতিশীল করতে পারব। সবার সঙ্গে বসে কীভাবে এখানকার সমস্যা সমাধান করা যায় সে চেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে কোনো এক জায়গায় যাতে রোগীর অধিক সমাগম না ঘটে তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া যায়। বিভাগওয়ারি যাতে চিকিৎসাসেবা দেয়া যায় সেটা করা যেতে পারে। 

দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আস্থা ফেরাতে কোন কোন উদ্যোগ নেয়া যায়?

আস্থা ফেরাতে চিকিৎসকদের অনেক কিছু করার আছে। প্রথমত, রোগীদের সময় দেয়া উচিত। রোগীকে শুধু রোগী হিসেবে না দেখে তার সঙ্গে চিকিৎসকের সম্পর্ক স্থাপন করা চাই। রোগীদেরকে নিকটাত্মীয়ের মতো দেখতে হবে। এমন একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করতে হবে যাতে রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সম্পর্কটা কিন্তু অনেক সম্মানের, আস্থার ও বিশ্বাসের। রোগীর সঙ্গে স্রেফ রোগ নিয়ে আলাপ না করে তার পরিবারের খোঁজখবর নেয়া, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত খোঁজখবর নিলে রোগীর আস্থা বাড়ে। চিকিৎসকের কাজ শুধু রোগীর মাথাব্যথা সাড়ানো নয়, মাথাব্যথার কারণও অনুসন্ধান করা। হয়তো রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন সে অর্থকষ্টে আছে, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে না বা ছেলেমেয়েরা তার দেখাশোনা করছে না কিংবা স্বামী নেই বা বিদেশ থাকে ইত্যাদি। 

বিএসএমএমইউকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী? আপনি যখন দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন, তখন এটিকে কোন জায়গায় দেখতে চান? 

আমি চাই বিএসএমএমইউ বাংলাদেশের একটি আইকনিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। দেশ-বিদেশের মানুষ যেন জানে বিএসএমএমইউ বাংলাদেশের একটি শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসা কেন্দ্র এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমার এটিই শুনতে ভালো লাগবে মানুষ যখন বলবে এখানে শিক্ষা ও গবেষণার মান ভালো এবং চিকিৎসার মান ভালো। আমি এসব কথা শুনে দায়িত্ব ছাড়তে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন