একাডেমি দিয়েই ২৩ কোটি পাউন্ড আয় করেছে সিটি!

ক্রীড়া ডেস্ক

ম্যানসিটির একাডেমি থেকে উঠে আসা তারকা ফিল ফডেন ছবি: রয়টার্স

ইউরোপের বড় ও ছোট সব ক্লাবেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো একাডেমি। মেধাবী কিশোরদের খুঁজে এ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তোলা হয়। সেখান থেকে কেউ নিজ নিজ ক্লাবেই খেলার সুযোগ পান, কাউকে আবার অন্য কোনো ক্লাবে বিক্রি করে দেয়া হয়। শীর্ষ ক্লাব ফুটবলে এ চর্চাটা নিয়মিতই হয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবেরই রয়েছে একাডেমি। গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে খেলোয়াড় বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তারা ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩ কোটি পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা) মুনাফা করেছে। এ অংকটি ইংল্যান্ডে শীর্ষে, আর গোটা ইউরোপে অষ্টম সর্বোচ্চ।

ই-টোরো প্রকাশিত ফুটবল ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ও ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য বলছে, শীর্ষ দশে জায়গা পাওয়া একমাত্র ইংলিশ দল ম্যানসিটি। 

তালিকার শীর্ষে থাকা পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার তুলনায় অবশ্য ম্যানসিটির অংকটা খুবই ছোট। এ সময়ে বেনফিকা একাডেমির খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় করে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড। তাদের আয়ের বড় একটি অংশ এসেছে হোয়াও ফেলিক্স, রুবেন দিয়াজ ও এডারসনকে বিক্রি করে। ফেলিক্স স্পেনের অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ঘুরে এখন রয়েছেন ইংল্যান্ডের চেলসিতে। আর দিয়াজ ও এডারসন উভয়ই খেলেন ম্যানসিটিতে। 

বেনফিকা ‘‌বি’ ও বেনফিকা সিনিয়র দলের হয়ে আলো ছড়ানোর পর ২০১৯ সালে ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ ১১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড (১২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো) ফিতে ফেলিক্সকে কিনে নেয় অ্যাতলেটিকো। এটা বেনফিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফি, অ্যাতলেটিকোর জন্যও সবচেয়ে দামি রিক্রুট। আবার কিলিয়ান এমবাপ্পের পর তিনিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল টিনএজ ফুটবলার। 

২০২৩ সালের ১১ জুলাই চলতি মৌসুমের বাকি সময় খেলার জন্য ধার চুক্তিতে চেলসিতে নাম লেখান ফেলিক্স। অ্যাতলেটিকোর সঙ্গে তার চুক্তিটা ২০২৭ সাল পর্যন্ত। সেন্টার ব্যাক রুবেন দিয়াজকে ২০২০ সালে ৬ কোটি ১৬ লাখ পাউন্ডে ম্যানসিটির কাছে বিক্রি করে দেয় বেনফিকা। সেই থেকে তিনি ক্লাবটির হয়ে ৮০ ম্যাচ খেলেছেন। 

ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এডারসনকে ২০১৭ সালে ম্যানসিটির কাছে বিক্রি করে ৩ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড আয় করে বেনফিকা। সেই থেকে তিনি সিটির নাম্বার ওয়ান গোলকিপার হিসেবে খেলে যাচ্ছেন দাপটে। 

উল্লেখ্য, গত এক দশকে দলবদলে যারা লাভ করেছে তাদের তালিকায় শীর্ষ দশের মধ্যে নেই ম্যানসিটিসহ ইংল্যান্ডের কোনো ক্লাব। এখানেও ১ নম্বরে ওই বেনফিকা। এরপর রয়েছে নেদারল্যান্ডসের আয়াক্স, ফ্রান্সের লিল ও অস্ট্রিয়ার রেডবুল সলজবুর্গ। তবে একাডেমি থেকে আয় করায় শীর্ষ দশে জায়গা পেয়েছে সিটি।

আবুধাবি গ্রুপের মালিকানাধীন ম্যানসিটি ২০১৪ সালে ২০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ে একেবারেই নতুন রূপে একাডেমিকে সাজায়। তারই ফল আসা শুরু করেছে এখন। 

গ্যাভিন বাজুনু, রোমেও লাভিয়া উভয়ই ম্যানসিটির একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং গত গ্রীষ্মের দলবদলে তারা নাম লেখান সাউদাম্পটনে। তাদের কেউই সিটির হয়ে লিগে একটিও ম্যাচ খেলেননি। এ দুই খেলোয়াড়কে বিক্রি করে উচ্চ ফি পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। 

ব্রাহিম ডিয়াজ, অ্যাঞ্জেলিনো, আনগুস গুন, লুকাস এনমেচা, জ্যাসন ডিনায়ার, পাবলো ম্যাফেও ও কেলেচি ইহেনাচোরা সবাই ম্যানসিটির একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়। 

ম্যানইউ স্টার জ্যাডন সাঞ্চোকে ২০১৫ সালে ১৪ বছর বয়সে ওয়াটফোর্ড থেকে প্রথমে ৬৬ হাজার পাউন্ড ফি দিয়ে সই করায় ম্যানসিটি। তাকে ‘‌এলিট প্লেয়ার পারফরম্যান্স প্ল্যান’-এর অংশ হিসেবেই আনা হয়। পরবর্তী সময়ে তার জন্য খরচ পড়ে ৫ লাখ পাউন্ড। সিটির একাডেমিতে মুগ্ধ করতে থাকেন সাঞ্চো। সিনিয়র টিমে তার অভিষেক ঘটার কথা থাকলেও চুক্তির শর্ত নিয়ে বিতর্কের কারণে প্রাক-মৌসুমের দল থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে গ্রীষ্মের দলবদলে ৮০ লাখ পাউন্ড ফিতে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে। জার্মান ক্লাবটির হয়ে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে ইউরোপের ক্লাবগুলোকে আকৃষ্ট করতে থাকেন তিনি। ২০২১ সালে ডর্টমুন্ড ছেড়ে নাম লেখান ম্যানইউতে। এ চুক্তি থেকেও আয় করে সিটি। সিটির একাডেমির খেলোয়াড় হওয়ায় তারা প্রথমে ১ কোটি ও পরে আরো ১ কোটি পাউন্ড পায়।

সিটির একাডেমি থেকে উঠে আসা ফিল ফডেন, রিকো লুইস ও কোল পালমাররা এখন তাদের ফার্স্ট টিমেরও সদস্য। 

নিউইয়র্ক, মেলবোর্নসহ বিশ্বব্যাপী আবুধাবি গ্রুপের ১২টি ক্লাব রয়েছে। এটাই তাদের সুবিধা করে দিয়েছে। মেধাবী কিশোরদের সই করানোর পর তাদের বিদেশে আবুধাবি গ্রুপের মালিকানাধীন অন্য ক্লাবের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় মূল ক্লাব ম্যানসিটিতে। ফুটবল ইনসাইডার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন